'নেই কাজ তো খই ভাজ' এই প্রবাদটি শোনেননি এমন বাংলা ভাষাভাষি লোকের সংখ্যা সত্যিই কম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে ভুট্টার খই বা পপকর্ন। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সারা দুনিয়াতেই পপকর্নের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে মানুষ খই বা পপকর্ন খাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে যেতে হবে কয়েক হাজার বছর পেছনে।
অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো অঞ্চলে পপকর্ন নিয়ে একটু বেশি মাতামাতি হয়। এটিকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই দেখেন মার্কিনিরা। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পপকর্ন দিবস। বিদসটি উপলক্ষ্যে এই সুস্বাদু খাবারের ইতিহাস নিয়ে কিছু মজার তথ্য জানা যাক-
যুক্তরাষ্ট্রের পপকর্ন বোর্ডের তথ্য মতে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মেক্সিকোতে ভুট্টার চাষ শুরু হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবিষ্কার করেছেন যে, ওই অঞ্চলের মানুষ প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে পপকর্ন সম্পর্কে জানে। পেরুর জীবাশ্ম থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ভুট্টা থেকে প্রথম পপকর্ন তৈরি করা হয়েছিল সেখানে।
উনিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে এটি পার্লস বা ননপারিল নামে বিক্রি হতো। 'পপড কর্ন' শব্দটি সর্বপ্রথম জন রাসেল বার্টলেটের ১৮৪৮ সালের 'ডিকশনারি অফ আমেরিকানিজম' এ যুক্ত করা হয়।
১৮৯০ এর দশকে চার্লস ক্রিয়েটরস পপকর্ন প্রস্তুত করার মেশিন আবিষ্কার করেন, যার ফলে পপকর্নের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। শিকাগোর একটি লজেন্সের দোকানের মালিক অনেকগুলো বাষ্পচালিত মেশিন তৈরি করেছিলেন, যার ফলে ভুট্টার দানাগুলোকে আরও সহজেই পপকর্ন হতে যেতো। ঠিক তার পরের শতকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে বাষ্পচালিত মেশিন ও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় পপকর্ন বিক্রি শুরু করেন প্রস্তুতকারকরা।
১৯৭০ সালে অরভিল রেডেনবাচারের নামের ব্র্যান্ডের পপকর্ন চালু হয়। ১৯৮১ সালে জেনারেল মিলস একটি মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন ব্যাগের প্রথম পেটেন্ট পান। ফলে পরবর্তী বছরগুলোতে হাজার হাজার পাউন্ড পপকর্ন বিক্রি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ছয়টি এলাকার মানুষ নিজেদের 'পপকর্ন ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' হিসেবে দাবি করেন।
দেশটিতে পপকর্ন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ভুট্টা বিশেষভাবে রোপণ করা হয়। টেক্সাসের ক্রমবর্ধমান এলাকাসহ নেব্রাস্কা এবং ইন্ডিয়ানাতে এধরণের ভুট্টার চাষ সবচেয়ে বেশি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যে সরকারি নাশতা হিসেবে যুক্ত হয় পপকর্নের নাম।
ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজও দুনিয়ার জনপ্রিয় খাবারগুলোর তালিকায় পপকর্ন তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া খাবারের তালিকায় পপকর্ন অন্যতম।
আরও পড়ুন: টিকা নেওয়ার পরও মানুষ কেন ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন?
মার্কিন পপকর্ন বোর্ডের মতে, বর্তমানে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর ১৫০০ কোটি কোয়ার্ট পপকর্ন বিক্রি হয়। এক কোয়ার্ট প্রায় এক লিটারের সমান।
সিনেমা হল থেকে শুধু করে ফুটবল ম্যাচ কিংবা পরিবার নিয়ে রাতের আড্ডা, এই খাবারটি ছাড়া এসব আয়োজন যেন অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.