আসন্ন শিশু দিবসকে সামনে রেখে কারাগারে থাকা ৭০ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য মা-বাবার জিম্মায় পাঠানোর বিরল রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালত। আদালতের এই রায়ের ফলে লঘু অপরাধের ৫০টি ভিন্ন মামলায় ৭০ জন শিশু এখন নিজের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকেি নিজেদের সংশোধন করার সুযোগ পেলো।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে সুনামগঞ্জ নারী শিশু ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আদালত কর্তৃপক্ষ ওই শিশুদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাড়িতে ফেরার পর ওই শিশুদের কার্যক্রম ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নান্টু রায় বলেন, কোমলমতি এই ৭০ জন শিশুকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। অভিযুক্ত এসব শিশুদের পরিবারের সঙ্গে আদালতে হাজিরা দিতে হতো। এর ফলে শিশুদের ভবিষ্যত এক অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে। তাদের শিক্ষাজীবন ব্যহত হয়। স্বাভাবিক জীবনে শিশুদের বেড়ে ওঠা হুমকির সম্মুখীন হয়। শিশুদেরকে এসব অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে মামলা সমূহ দ্রুত নিস্পত্তি করে দিয়েছেন বিচারক।
তিনি আরও জানান, কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে রেখে সংশোধনের কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত। পরিবারের সান্নিধ্যে এসব কোমলমতি শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে এবং সুন্দর জীবন গঠনের সুযোগ পাবে। এসব শিশুদের জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ার জন্য বিচারকের এমন বিরল রায়কে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
যে সব শর্তে শিশুদের সংশোধনের সুযোগ দিয়ে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে সেগুলো ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কিনা তা আগামী এক বছর জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর আদালতকে অবহিত করবেন।
এডভোকেট নান্টু রায় বলেন, যে সব শর্তাবলী পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত তা হলো; প্রতিদিন দুইটি ভালো কাজ করা এবং তা তাদেরকে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ডায়েরিতে তা লিখে রাখা ও বছর শেষে ডায়েরি আদালতে জমা দেওয়া, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা এবং বাবা মায়ের সেবা যত্ন করা ও কাজে কর্মে তাদের সাহায্য করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা এবং ধর্মকর্ম পালন করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোন অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানোসহ আরও কিছু নির্দেশনা পালনের শর্ত দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার ৫২ পদ নিয়ে কলকাতা মাতাচ্ছেন নয়না
তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশনাগুলো তাদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠার সুযোগ দেবে। শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেলে স্বাভাবিক বিকশিত হবে এবং বাবা-মা’র দু:শ্চিন্তার অবসান হবে।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.