প্রচলিত সমাজ কাঠামোয় একজন নারীকে সম্ভবত সর্বোচ্চ স্থানে বসায় 'মাতৃত্ব'। নিজের ভেতর ১০ মাস ধারণ করে সন্তান জন্ম দেয় একজন মা। জন্মের পরও সন্তান লালন-পালনের প্রধান দায়িত্বও থাকে একজন মায়ের কাঁধেই।
কিন্তু সন্তান ধারণ থেকে জন্ম দেয়া ও তার পরে লালন-পালনের এই পুরো যাত্রায় শারীরিক, মানসিক ও হরমোনাল পরিবর্তনে যে চাপ একজন নারীর ওপর তৈরি হয় তা নিয়ে আলাপের জায়গা আমাদের সমাজে খুবই কম।
সন্তান জন্মদানের সাথে সাথেই একজন নারীর 'ভালো মা' হয়ে উঠার প্রত্যাশা করা হয়। সমাজের প্রত্যাশা এবং সে স্থানে নিজেকে দাঁড় করানোর প্রয়াসে সব মিলিয়ে যে চাপ তৈরি হয় তাতে নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের সাথে প্রতি মুহূর্ত লড়াই করতে হয় একজন মা'কে। এক্ষেত্রে বেশি চাপে থাকেন কর্মজীবী নারীরা। একদিকে পেশাগত অবস্থান, অন্যদিকে সমাজের প্রতাশা পূরনের চাপ; সাথে শারীরিক, মানসিক ও হরমোনাল পরিবর্তনকালে একজন নারীর জন্য কতটা সহজ হয় স্বাভাবিক জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো?
পুরনো আত্মপরিচয়কে ছাপিয়ে মা হিসেবে একজন নারীর নতুন রূপায়নের, স্বকীয় মানুষ থেকে মাতৃত্বের দিকে যাত্রায় অবধারিতভাবেই দেখা যায় এক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে নৃতাত্ত্বিকরা নাম দিয়েছেন 'ম্যাট্রেসেন্স' বা 'পরিপক্কতা'।
প্রত্যাশা ও প্রচলিত প্রথার মাঝে আটকে যাওয়া জীবনে এসময় পেশার বদলে মাতৃত্বকেই বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা যায় একজন নারীকে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রায় ৪৩ শতাংশ মা মাতৃত্বের যেকোনো এক সময় কাজ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। এছাড়া প্রায় ৯৩ শতাংশ তাদের পেশাগত জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছের বিষয়টিও উঠে এসেছে একই গবেষণায়।
আরও পড়ুন: গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়েছে
প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নারীর থাকে বলে সন্তান পালন ও যত্ন নেওয়ার প্রাথমিক দায়িত্বও সমাজ নারীর কাঁধেই তুলে দিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি কেন ঊহ্য থাকবে? বরং ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে শ্রমবিভাগের এ বিষয়টি আধুনিক সভ্য জগতেরই আবিষ্কার।
আফ্রিকার 'আকা' সম্প্রদায়ের পুরুষরা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব নারীর সাথে সমানভাগে ভাগ করে নেন। পাশাপাশি রাতের বেলা সন্তানের যত্ন নেওয়ার মূল কাজটিও করে থাকেন তারা। এমনকি সন্তান কান্নাকাটি করলে বাবা নিজের স্তনদান করেন তাদের সন্তানকে শান্ত করার জন্য। এসময় নারীরা শিকারেও অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, নাড়ির সম্পর্ক ধারণায় সন্তান ও মায়ের মধ্যে যে হরমোনাল বিষয় কাজ করে, একই লিঙ্গের দুইজন সঙ্গীর যে ব্যক্তি সন্তান পালনে অধিক সক্রিয় থাকেন তার মাঝেও একই হরমোনাল বিষয় কাজ করে।
মোটা দাগে পুরো ব্যাপারটিতে সন্তানের জন্য নারীকে সম্পূর্নরূপে উজাড় করে দেওয়ার বিষয়টি নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। বংশ রক্ষায় নারীকে সন্তান ধারণ করতে হলেও পরবর্তী ধাপে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ জরুরি। 'মা' হবার পাশাপাশি একজন নারী নিজেকে যে অবস্থানে দেখতে চান সে পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় কি এখনই না?
একাত্তর/টিএ
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.