দেশের কোনো চিনিকলই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, আধুনিকায়নের জন্য সাময়িকভাবে চিনিকল কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আবারও সব কারখানা চালু করা হবে।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আখের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়। এ বিষয়টিও যাচাই বাছাই করা হবে। কৃষকদের দাবি মানার বিষয়টি দেখা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
অন্যদের ছিলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর প্রমুখ।
পরে কেরুর ট্রেনিং সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি ও ভার্চুয়াল এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হন দুই মন্ত্রী।
মত বিনিময় সভায় দেশের সব কয়টি চিনিকলের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়।
চিনিকলের শ্রমিকরা জানান, এ বছর মিলস হাউজের ফিটিংয়ের কাজ ভালো হয়েছে। মিল ভালোই চলবে। ফলে বেশি চিনি উৎপাদন সম্ভব হবে।
কৃষকদের দাবি, আখের মূল্য প্রতি মণ ১৪০ টাকা (মিলস গেটে) হলেও ২৫০ টাকা করতে হবে।
কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোশারফ হোসেন জানান, চিনিকল এলাকায় আখের চাষ কম হয়েছে। এজন্য এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে নেমে এসেছে। মিল চালু হলে চলতি বছর চিনিকল এলাকায় আখ চাষের পরিমাণ বেশি হবে।
চলতি মৌসুমে কেরু মিল জোনে দণ্ডায়মান আখ রয়েছে চার হাজার ৬২৭ একর জমিতে। এছাড়াও পাশের কুষ্টিয়া চিনিকলের চার হাজার মেট্রিক টন আখ কেরু চিনিকলে মাড়াই করা হবে। এ মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ মাড়াই দিবসে প্রতিদিন গড়ে ১১৫০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করবে চিনিকলটি। ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে শতকরা ছয় ভাগ চিনি আহরণের মাধ্যমে তিন হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে মোটা অঙ্কের লোকসান কমিয়ে এ বছর লাভের মুখ দেখবে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এমনটিই আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: লঞ্চে আগুন: ঢাকায় ভর্তি সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে: ডা. সামন্তলাল সেন
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মধ্যে অব্যাহত লোকসানের কারণে সরকার গত বছর ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। চালু রাখে ৯টি। এগুলো হচ্ছে- দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি, ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল, ফরিদপুর চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল, নাটোরের নর্থ বেঙ্গল চিনিকল, ঠাকুরগাঁও চিনিকল, জয়পুরহাট চিনিকল ও জামালপুরের জিলবাংলা চিনিকল। বন্ধ ৬টি হলো- কুষ্টিয়া চিনিকল, পাবনা চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, রংপুর জেলার শ্যামপুর চিনিকল, গাইবান্ধা জেলার রংপুর চিনিকল ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড়ো চিনিকল দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। চিনি উৎপাদন কারখানা, ডিস্টিলারি, জৈব সার কারখানা ও ওষুধ কারাখানার সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ এ শিল্প কমপ্লেক্সের চিনি কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতভাবে লোকসান গুনে আসছিল।
একাত্তর/এসি
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.