মহামারি করোনার ছোবলে বিক্ষত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়েছিলো আর্থিক খাতের ২০২১ সাল। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যাংক লেনদেনসহ অফিস কার্যক্রম কখনও বন্ধ , কখনও আধা খোলা আবার কখনও ঢিলেঢালাভাবে চলে এ খাত। কিন্তু মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় একদিকে গতিহীন হয় বেসরকারি ঋণ প্রবাহ, অন্যদিকে ব্যাংকে জমে টাকার পাহাড়। নিম্নমুখী সুদহার বেকায়দায় ফেলে আমানতকারীদের। লাগাম টানা যায়নি খেলাপি ঋণেরও। ছিল কর্মী ছাঁটাই, ব্যাংকের শীর্ষকর্তাদের দুর্নীতি, ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসসহ নানা ঘটনা।
বছরের শুরু থেকেই মূল্যস্ফীতি, বাজারে টাকার সরবরাহ নিশ্চিতসহ প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়াই আর্থিক খাতের মূল চ্যালেঞ্জ। তাই এ বছরে শুরুতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৩ প্যাকেজের আওতায় দুই দফা আড়াই লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্প বাঁচাতে দেড় লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ বিতরণের দায়িত্ব পায় ব্যাংকগুলো। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিড়ম্বনা, অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ছিলো শুরু থেকেই। এখনও প্রণোদনার অর্থ পায়নি দেশের ৭৯ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এরই মধ্যে অর্থ আদায়ও হচ্ছেনা ঠিকমতো।
প্রণোদনা ঋণ বিতরণের ব্যস্ত আর্থিক খাত ৯ শতাংশ সুদ হার দিয়ে আকর্ষণ করতে পারেনি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। বছরভর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়েই ছিলো বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ। তবে নভেম্বরে এই হার ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশের ঘর।
চলতি বছরের মে-তে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। বছরভর বাড়তি রিজার্ভের আত্মতুষ্টিতে থাকা ঋণ দিয়ে শ্রীলঙ্কার পাশে ছিলো বাংলাদেশ ।
বছরের শুরুতে রেমিট্যান্স চাঙ্গা থাকলেও বছর শেষে লাগে ভাটার টান। রপ্তানি কমার বিপরীতে আমদানি খরচ বাড়ায় দেখা দেয় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেও পার পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করতে সঞ্চয়পত্রে শর্ত জুড়ে দেয় সরকার। গত এসে সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহারও কমানো হয়।
মহামারির সংকটে বছরভর ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হয় বিতরণকৃত ঋণের আট দশমিক ১২ শতাংশ। বছর ব্যবধানে খেলাপি বাড়ে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
ভল্ট থেকে বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৯ কোটি আর ঢাকা ব্যাংকের চার কোটি উধাও আলোচনার শীর্ষে ছিলো বছরভর।
সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, এ বছর দুর্নীতি আলোচনায় শীষে ছিল সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের নাম। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হয় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
আরও পড়ুন: ছেলেদের পেছনে ফেলে এগিয়ে মেয়েরা
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনিয়মে পিছিয়ে ছিলো না ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। অনিয়মে সহায়তার অভিযোগে প্রথমবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদে আসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নর ও কয়েকজন নির্বাহী পরিচালককে। আর বছরের শেষ দিকে সমালোচনার জন্ম দেয় সরকারি ব্যাংকের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা।
পুঁজিবাজারভুক্ত ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমাসহ নানা ইস্যুতে বছরজুড়ে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিও।
একাত্তর/এসি
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.