ঢাকা ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের পেছনে সীমাহীন অনিয়ম

হাবিব রহমান, একাত্তর
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী ২০২২ ২১:৫১:৪৬
অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের পেছনে সীমাহীন অনিয়ম

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ আগুন দুর্ঘটনার জন্য মাস্টার ও চালকসহ মালিক পক্ষের গাফলতিকে দায়ী করেছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

তাদের তদন্ত বলছে, লঞ্চটিতে নানা ত্রুটি থাকার স্বত্বেও সেটি চলাচলের অনুমতি পেয়েছিলো। এ ব্যাপারে দায়ী কর্তৃপক্ষের শাস্তির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে এমন দুর্ঘটনা রোধ ও নৌ পথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৫টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া আহত রয়েছেন শতাধিক যাত্রী, নিখোঁজও আছেন অনেকে। এই দুর্ঘটনার কারণ জানতে ১৬টি সংগঠনের উদ্যোগে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে নাগরিক তদন্ত কমিটির করা তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার দে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌযানটিতে ৩০৩৬ বিএইচপি ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন ছিলো। কিন্তু সার্ভেতে উল্লেখ ছিল চার স্ট্রোক বিশিষ্ট ১১০০ বিএইচপি ইঞ্জিন।

১০৫ টি বয়া থাকার কথা থাকলেও ছিল মাত্র ৩৫টি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ১২টি ফায়ার হাইড্রান্টের জায়গায় ছিলো ছয়টি। এছাড়াও লঞ্চটির বেশকিছু ত্রুটির তথ্য গোপন করা হয়েছিলো।

নৌযানের নতুন অথবা উচ্চ গতিসম্পন্ন কোন ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করলে ইঞ্জিনের অনুপাতে পাইপলাইন বা এগজস্ট পাইপ পরিবর্তন করতে হয়।

কিন্তু অভিযান-১০ লঞ্চটিতে এগজস্ট পাইপ বড় করা হয়নি। ফলে ইঞ্জিন কক্ষের আশপাশের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়।

যেহেতু ইঞ্জিনের কাছাকাছি থেকে তাপ ছড়িয়েছে সেজন্য ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনা ঘটে। এর জন্য লঞ্চের মালিক, সরকারি কর্মকর্তারাসহ ১২ জন দায়ী।

এছাড়া, যে প্রতিষ্ঠান থেকে লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়, তাদেরও আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

আশীষ কুমার দে বলেন, লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষের পোর্ট সাইডের প্রধান ইঞ্জিনের ৩ নম্বর ইউনিটের ইন্ডিকেটর কক খোলা ও লকিং নাট আলগা ছিল।

ইন্ডিকেটর ককের লকিং নাট আলগা থাকায় ঝাঁকুনিতে আস্তে আস্তে ইন্ডিকেটরটি খুলে যায়। ফলে আগুনের ফুলকির সংস্পর্শে এসে চারপাশে বাতাসের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

ইঞ্জিন কক্ষে কোন ড্রাইয়ার কিংবা গ্রিজার না থাকায়, একপর্যায়ে সেখানে থাকা ডিজেল ট্যাংকারে সংস্পর্শে এসে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে লঞ্চে।

তদন্ত কমিটি মনে করে, এই দুর্ঘটনার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ, নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ, লঞ্চটির চার মালিক, প্রথম শ্রেণির মাস্টার ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার এবং প্রথম শ্রেণির ড্রাইভার ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার জন্য দায়ী।

কমিটির আহ্বায়ক জানান, ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এসব ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে নৌ দুর্ঘটনা বন্ধে ২৫টি সুপারিশও করেছে।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দায়ী সকলকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাবে এবং দুর্ঘটনাও কমবে না।

আরও পড়ুন: শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়া দুঃখজনক: শিক্ষামন্ত্রী

দুর্ঘটনায় নিহত পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণের আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাত্রীবাহী নৌযানে আনসার/সিকিউরিটি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

লঞ্চের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেক নাবিকের ইউনিফর্ম পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে।

নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ অধিদপ্তরকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান।

একাত্তর/আরএ

মন্তব্য

এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.

আপনার মন্তব্য লিখুন

Nagad Ads