আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। বিংশ শতাব্দীর প্রধান এ বাঙালি কবি ও সংগীতকারের সম্মানে সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হচ্ছে দিনটি। একইসাথে এ বছর তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচনার শতবর্ষ পূর্ণ হলো।
১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল "দুখু মিয়া"।
খুব ছোট বয়সেই নজরুল গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। ১৯০৮ সালে তার বয়স যখন মাত্র নয় বছর তখন তার পিতার মৃত্যু হয়। এরপর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। এ সময় মক্তবে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। লেটো গানের দলেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
১৯১৭ সালের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন।
জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) বেলা ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। কবির জন্মদিনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাসস জানায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী ও তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, সাম্য, মানবতা, প্রেম ও প্রকৃতির কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও সৃজনশীল কর্ম জাতির অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা মুক্তিকামী মানুষকে অনিঃশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বাতন্ত্র্য মহিমায় সমুজ্জ্বল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন কবির প্রতি একান্ত অনুরক্ত। স্বাধীনতা–পরবর্তী পর্যায়ে তারই ঐকান্তিক আগ্রহে কবিকে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির সম্মানে অধিষ্ঠিত করা হয়। নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।
একাত্তর/আরবিএস
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.