আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই ইলেক্ট্রনিক ভোটিংয়ের বিপক্ষে মত দিয়েছে।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। ক্ষমতাসীনরা ছাড়া বেশিরভাগই দলই ইভিএম চায় না।
আর বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সবার সাথে আলোচনা ও পর্যালোচনার পরেই বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম ব্যবহারের কার্যকারিতা নিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন।
তারই অংশ হিসেবে তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আমন্ত্রিত ১৪টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পাটিসহ ১০ দল অংশ নেয়।
আলোচনার শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, তারা ইভিএমের পক্ষে। শুধু তাই নয় আগামী নির্বাচনে ইভিএম বাড়ানোর দাবিও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের পার্টির স্ট্যান্ড হচ্ছে, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
সেই সিদ্ধান্ত আমাদের দিস ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার- আমরা ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে, রাখঢাক করে কোনো লাভ নেই। এখানে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতিটা বৃদ্ধি করার কথা বলব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসি কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হবে। আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য ইসির গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া ইসির দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ আচরণ, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ইভিএমে ভোটগ্রহণের পদ্ধতি বৃদ্ধি করতে হবে।
এ ছাড়া তিনি বিতর্কিত কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়া, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের রিটার্নিং অফিসার থেকে পোলিং অফিসার নিয়োগসহ একগুচ্ছ দাবির কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ কেউ বলে থাকে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকারের অধীনে কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। যে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বর্তমান সরকার ফ্যাসিলেটেড করবে, সম্পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেব।
আওয়ামী লীগের পক্ষেই একই মত দেয় সাম্যবাদী দল, বিকল্পধারা, তরিকত ফেডারেশন। তবে তড়িঘড়ি করে ইভিএমের বিরোধিতা করে জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি, ন্যাপসহ বেশকিছু দল।
বৈঠক শুরুর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিই, কিছুদিন পর থেকেই ইভিএম নিয়ে কথাবার্তা পত্রপত্রিকায় চাউর হয়েছিল।
এর বিপক্ষেই বেশি কথাবার্তা হয়েছে। শুরু থেকে ইভিএম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। ব্যক্তিগত ধারণাও ছিল না। এরইমধ্যে ইভিএম নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এখন মোটামুটি ধারণা আছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
আর বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আগে আমরা দু’দফা সংলাপ করেছি। অনেকেই ইভিএমের পক্ষে বলেছেন। অনেকে সলিউশন দিয়ে বলেছেন, আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম হলে আরও ভালো।
আবার অনেকে সরাসরি বলেছেন, তারা ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলে নির্বাচনে যাবেন না। আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।
তবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করবো, সেটা আমাদেরই (ইসি) সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আজকে আপনারা বড় বড় দলের অনেকেই এসেছেন। আজকে আমাদের আলোচনাটা ইভিএমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
আপনারা ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে বলতে পারেন। দোষ-ত্রুটি থাকলে বলতে পারেন। সংশয় থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন। আমাদের বিশেষজ্ঞরা তার উত্তর দেবেন।
আমরা আপনাদের কথাগুলো শুনবো। আপনাদের আলোচনা শুনে পরবর্তী সময়ে আমরা বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্তে উপনীত হবো বলেও যোগ করেন সিইসি।
মঙ্গলবার ১৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে, দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি।
১৯ ও ২১ জুন দুই ধাপে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ইভিএম যাচাই বিষয়ক সভা করেছে ইসি। তবে ওই দুই ধাপে ১৮ দল উপস্থিত থাকলেও সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ ৮ দল।
একাত্তর/এআর
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.