ধূমপান ফুসফুসের মারাত্মক সব রোগের কারণ। সিওপিডি(COPD) তেমনই একটি রোগ। ধূমপান ছাড়া কাঠ, কয়লা, তেল, গ্যাস ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার
এবং দূষণযুক্ত বায়ু সিওপিডির অন্যতম কারণ। এই রোগে ফুসফুসের বায়ু থলির ক্ষতি হয়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ু থলি ও তার মধ্যবর্তী সূক্ষ্ম
পর্দা ধ্বংস হয়। পাশাপাশি থাকা বায়ু থলিগুলো এক হয়ে আকার-আয়তনে বড় হয়। ফলে
ফুসফুসের কার্যক্ষম বাযু থলির সংখ্যা কমে যায়। একই সাথে ফুসফুসের বেলুনের মত চুপসে
যাওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ফুসফুসের এই অবস্থার নাম
এমফাইসিমা (Emphysema)।
বাতাস যখন ভয়ঙ্কর- প্রথমপর্ব
ফুসফুসের মূল কাজই হচ্ছে বাতাসের অক্সিজেন রক্তের
মাধ্যমে সারা দেহে পৌঁছে দেয়া আর দেহে তৈরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে
ফুসফুসে এনে বের করে দেয়া। কার্যক্ষম বায়ু থলির সংখ্যা কমে যাওয়ায় এ কাজটি ব্যহত
হয়। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটে, শ্বাসকষ্ট হয়।
এমফাইসিমা আক্রান্ত ফুসফুসে বাতাসের পরিমাণ স্বাভাবিক
ফুসফুসের চেয়ে বেশি, আর ফুসুফুসও এই কারণে আকারে বড় হয়।
কিন্তু কর্মক্ষম বায়ু থলির অভাবে এই বাতাস আমাদের কাজে আসে না।
এমফাইসিমা আক্রান্ত ফুসফুসে রোগ জীবাণুর সংক্রমণ
প্রবল শ্বাস কষ্টের কারণ হয়। আমাদের স্বাস-প্রশ্বাসে পুরো ব্যবস্থাপনায় বড় ধরণের
বিপত্তি ঘটায়। শ্বাস তন্ত্র তার কার্ককারিতা হারাতে থাকে।
কখনো কখনো পাশাপাশি থাকা অনেকগুলো বায়ু থলি ক্রমাগত
একত্রিত হতে হতে অনেক বড় হয়ে যায়। তখন এর নাম হয় বুলা (Bullae)। বুলা আসলে বাতাস ভর্তি ফাঁপা
বেলুনের মত। বুলার বেলুন যত বড় হতে থাকে কার্যক্ষম বায়ু থলির সংখ্যাও তত কমতে
থাকে।
বুলা তার চারপাশের পূর্ণ বা আংশিক কার্যক্ষম বায়ু
থলিগুলোতে চাপ দিয়ে তাদের চুপসে দেয়। চুপসে যাওয়া ফুসফসে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়।
বুলা ক্রমশঃ বড় হতে থাকলে হৃৎপিণ্ডের উপরও চাপ দেয়, হৃৎপিণ্ডের
কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
সিওপিডি রোগ কখনো ভালো হয় না এবং এমফাইসিমা আক্রান্ত
ফুসফুসও কখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পায় না। ধূমপান থেকে বিরত থাকলে এবং আর যে সব
কারণে সিওপিডি হয় তা পরিহার করলে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন
করলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
পর্যাপ্ত ওষুধ ব্যবহারের পরও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া না
গেলে আসে সার্জারির সিদ্ধান্ত। বক্ষব্যাধি সার্জন আর অবেদনবিদ মিলে সিদ্ধান্ত নেন
কারা এই সার্জারির জন্য উপযুক্ত। এই ধরণের অপারেশনে ফুসফুসের অকার্যকর অংশ অপসারণ
করা হয়।
আসলে বাতাস শরীরের মধ্যে নির্ধারিত চলাচলের বাইরে
গেলেই বিপত্তি। শুধু যে বুকের ভেতরে এমনটি ঘটে তা নয়; উদরে হতে পারে, হতে পারে মাথার খুলির ভেতরে।
এমনকি ত্বক বা চামড়ার নিচে এসে ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো
শরীরে। চিকিৎসকরা এই অবস্থার নাম দিয়েছেন সার্জিক্যাল এমফাইসিমা। ত্বকের নিচে অবস্থানের কারণে এই
রোগের আরেক নাম সাবকিউটিনাস এমফাইসিমা।
সাধারণত রোগাক্রান্ত ফুসফুসে ক্ষত তৈরি হলে অথবা
শ্বাসনালি ও ফুসফুস জখম হলে এমনটি হয়ে থাকে। চামড়ার নিচে বাতাস জমার কারণে সেই
জায়গা ফুলে উঠে, হাত দিয়ে চাপ দিলে ‘পচ পচ’ শব্দ অনুভূত হয়।
বাতাস যখন ভয়ঙ্কর- প্রথমপর্ব
মৃদু রোগ সহজেই সেরে যায়, ত্বকের নিচের বাতাস শরীরে মিলিয়ে যায়। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে
কারণ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেন।
অনেক সময় কারণ শনাক্ত না হলে বা নিজে থেকে কারণের
উপশম না হলে ত্বকের নিচে এই বাতাস বাড়তে থাকে, পুরো শরীরে ছড়িয়ে
পড়ে। ঘাড়, গলা, চোখ, মুখ হাত,পা সব ফুলে উঠে। চেহারা বিকৃত হয়, দেখতে ভয় লাগে। রোগ গুরুতর আকার ধারণ করে। এই সময় দরকার হয় শল্য চিকিৎসা,
এগিয়ে আসেন বক্ষব্যাধি সার্জন।
লেখক: পেশায় চিকিৎসক এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট
ও হাসপাতালের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
ই-মেইল: [email protected]
মন্তব্য
এই নিবন্ধটি জন্য কোন মন্তব্য নেই.