ঈদ মানেই আনন্দ। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর পাশাপশি এই ঈদের অন্যতম আনন্দ অনুষঙ্গ হলো ঘোরাঘুরি। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা এসব বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দে মেতেছিলো সব বয়সের মানুষ।
শুক্রবার ফ্যান্টাসি কিংডমে ঈদ উৎসবে মেতে ওঠে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বিনোদনপ্রেমী মানুষ। কেউ রোলার কোস্টারে উঠছেন, কেউ বা ওয়াটার কিংডমে গিয়ে পানিতে গা ভাসাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ জানান, সেফটি, সিকিউরিটি আর কমফোর্টের কারণেই ফ্যান্টাসি কিংডম সবার প্রথম পছন্দ।
দিনের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও অনুভুত হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তারই মাঝে ফ্যান্টাসি কিংডমের ওয়াটার কিংডমে জলকেলিতে মেতে উঠেন সবাই। ফ্যান্টাসি কিংডম ছিলো দর্শনার্থীতে ঠাসা। বরাবরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে ফ্যান্টাসি কিংডমের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে ঈদ বিশেষ প্যাকেজ।
এর মধ্যে ২২০০ টাকার প্যাকেজ নেমে এসেছে ১৫০০ টাকায় আর ১৭৫০ টাকার প্যাকেজ ১২৫০ টাকায়। দেড় হাজার টাকার প্যাকেজে ফ্যান্টাসি কিংডমে এন্ট্রিসহ ১৫টি রাইড ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও ওয়াটার কিংডমের অলরাইড ব্যবহার সাথে লাঞ্চ বা ডিনারসহ আইসক্রিম বা কোমল পানীয় পাচ্ছে সুইমাররা।
১২৫০ টাকার প্যাকেজে এন্ট্রিসহ ১৫টি রাইডে ওঠার সুবিধা ছাড়াও এক্সট্রিম রেসিং বা লাঞ্চ সাথে কোমল পানীয় বা আইসক্রিম। ফ্যান্টাসি কিংডমে শুধু এন্ট্রি ফি ৫০০ টাকা। ছোটদের লাগছে ৩০০ টাকা। কর্তৃপক্ষ জানান, সেফটি, সিকিউরিটি আর কমফোর্টে আপোস করোনা বলেই মানুষের প্রিয় ফ্যান্টাসি কিংডম।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরের আগেই মিরপুর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। এবারের ঈদ আর বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে টানা ছয়দিন ছুটি থাকায় এই ভিড় স্মরণকালের রেকর্ড ছাড়াবে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। সকাল নয়টায় মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক খুলে দেয়া হয়।
চলেছে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে সকাল নয়টার অনেক আগে থেকেই দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে টিকেট কাউন্টার খোলার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। টিকেট বিক্রি শুরু হওয়া মাত্রই হুড়মুড় করে টিকেট কাটতে শুরু করেন অনেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় বাড়তে থাকে।
দুপুরের আগেই দর্শনার্থীর সংখ্যা লাখের ঘরে পৌঁছে যায়। বিকেল নাগাদ এই সংখ্যা যায় দেড় থেকে দু’লাখে। ভেতরে প্রবেশ করে পশু-পাখি দেখে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন তারা। শুধু ঢাকা নয়, আশপাশের জেলা থেকেও ঈদ আনন্দ উপভোগে রাজধানীর চিড়িয়াখানাতে ছুটে এসেছেন অনেক দর্শনার্থী।
চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর ভিড় ব্যাপক বাড়ার কারণে আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঈদের দিনের দুর্ঘটনার পর এই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। বাঘ, সিংহ ও হাতিসহ কয়েকটি প্রাণির খাঁচা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও মজবুত করা হয়েছে।
রাজধানীর হাতিরঝিলেও সকাল থেকে বেড়াতে এসেছে সব শ্রেণি ও বয়সের মানুষ। তবে বিকেলের দিকে এই ভিড় আরও বাড়ে। মানুষ ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন। এজন্য খরচ করতে হচ্ছে জনপ্রতি ৮০ টাকা। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে হেঁটেও বেড়াচ্ছেন অনেকে।
রাজধানীর রমনা পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ঘাসের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছে অনেকেই । কেউ এসেছেন ছোটদের সঙ্গে করে। শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করছে ঘাসের ওপর। তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রঙের বেলুন, খেলনা। বে শিশুদের নিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে রমনা পার্কে ছুটে এসেছেন তারা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের শিখা চিরন্তনের সামনে মানুষের ব্যাপক ভিড়। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলায় মত্ত হয়েছেন তারা। এছাড়া পুরো উদ্যানজুড়ে সবুজ ঘাসের ওপর বসে সময় কাটাচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। বিকেলেছায়ায় বসে ঠান্ডা বাতাসে আরাম করেছেন অনেকে।
নগরবাসীরা মনে করছেন, তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে ঈদের তৃতীয় দিনেও সকাল থেকেই মানুষ ছুটে যাবেন ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে। এরপরেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মাতবে। ঈদের ছুটির সঙ্গে বর্ষবরণের আনন্দ যোগ হওয়াতে যেন ব্যস্ত রাজধানীর আকাশে বাতাসে অন্যরকম আনন্দ।