চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের পর খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হতে যাচ্ছে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ১১টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষ জল্লাদ নির্বাচনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু ও একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল। বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে টানা ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে ভুক্তভোগী দুই পরিবারের।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশ খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠ থেকে দুই নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তে জানা যায়, খুনের আগে তাঁদের দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই দুই তরুণী বান্ধবী ছিলেন।
ঘটনার পর নিহত এক তরুণীর মা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এই মামলায় মিন্টু, আজিজ ছাড়াও একই গ্রামের সুজন আলি ও মহিউদ্দিনকে আসামি করা হয়েছিল। আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশ এজাহারভুক্ত চার আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার চলাকালে আসামি মহিউদ্দিনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: দুইজনের যাবজ্জীবন
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সরকার আবুল মনসুর আহম্মদ আসামি মিন্টু, আজিজুল ও সুজন আলির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের পর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।
এদিকে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ আসামি সুজন আলিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তবে অন্য দুই আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। গত ২০ জুলাই সুজন আলি কারামুক্ত হন। মিন্টু ও আজিজ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও সেটি নাকচ করা হয়।
জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, ফাঁসি কার্যকর করতে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমানসহ আটজন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের সময়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে মিন্টু ও আজিজের স্বজনেরা শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাঁদের দুজনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সেখানে খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যান জানান, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মিন্টু ও আজিজুল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন।
একাত্তর/এসজে