কুমিল্লা ইপিজেড এবং এর বাইরের দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত তরল বর্জ্য আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের ফসলের জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতির অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা নগর ভবন মিলনায়তনে কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর নিকট স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন ওই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী।
এসময় তিনি কৃষকদের জমির ফসল ও লক্ষাধিক পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এর প্রতিকারের দাবি জানান। অন্যথায় কুসিক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। স্মারকলিপিতে যাত্রাপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমবায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম ও দিশাবন্দ গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা নগরীর পয়ঃ ও পানি তিনটি খাল দিয়ে দক্ষিণের ডাকাতিয়া নদীতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এসব খালের পানির সাথে ইপিজেডের বিষাক্ত রাসায়নিক তরল বর্জ্য দিশাবন্দ, ঢুলিপাড়া, কাজীপাড়া, উত্তর হীরাপুর, শ্রীবল্লভপুর, গোপিনাথপুর, দক্ষিণ রামপুর, দূর্গাপুর, হোসেনপুর, নোয়াপাড়া, শ্রীনিবাস, উত্তর বিজয়পুর, ছনগাঁওসহ শহরের দক্ষিণাংশের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষি জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশছে।
এছাড়া দক্ষিণ দূর্গাপুর এলাকার সফিউল আলম স্টিল মিল ও বাতাবাড়িয়া এলাকার সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য এসব এলাকার পানিতে মিশে একাকার হয়ে কৃষি জমির ফসল, গাছ-পালা, বাড়িঘর ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর প্রতিকার করা না গেলে শহরের দক্ষিণের অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকার মানুষজনকে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন: ছেলের কাণ্ডে বন্ধ শাহরুখের বিজ্ঞাপন প্রচার
কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি কমিটি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে সার্ভে করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে এবং প্রতিকারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করলেও তারা দুই ঘণ্টার বেশি কাজ করে না, বাকি বর্জ্য শোধন ছাড়াই ড্রেনে ছেড়ে দেয়ায় এমন ক্ষতি হচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তিনিও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিকারের উদ্যোগ নেবেন বলে ভূক্তভোগী এলাকার জনগণকে আশ্বস্ত করেন।
কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ইপিজেডের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। আমরা নিজেদের বর্জ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণে রাখি। কুমিল্লা শহরের পানি ও বর্জ্য ইপিজেডের পাশের বড় ড্রেন দিয়ে খালে প্রবাহিত হয়ে একাকার হয়। নগরীর পানি প্রবাহের প্রক্রিয়া আরো উন্নত করা হলে পরিবেশ দূষণ কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কুমিল্লা সিটি মেয়রের নিকট কুমিল্লা শহরের দক্ষিণের প্রবেশ ও নির্গমন সড়কের উন্নয়নে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা শহরের প্রবেশপথ নোয়াগাঁও চৌমুহনী থেকে নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বর অংশের স্থগিত হওয়া কাজ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কাজের দাবিতে সওজ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নিকট পৃথক স্মারকলিপি দাখিল করা হয়।
একাত্তর/টিএ