‘সড়কের মাটি কেটেই সড়ক প্রশস্ত’ শিরোনামে নাটোর-বগুড়া সড়ক নির্মানে
অনিয়মের সংবাদ প্রচারের পর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নাটোরের জেষ্ঠ বিচারিক হাকিম
আবু সাঈদ।
প্রচারিত খবরটি দেখে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ বুর্যো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই’কে নির্দেশ দিয়েছেন।
নাটোর বগুড়া সংযোগ সড়কের কিছু অংশ চার লেন এবং কিছু অংশ প্রশস্ত করার কাজ চলছে। এই প্রশস্ত করার কাজের জন্য যে মাটির প্রয়োজন হবে, তা ঠিকাদার রাস্তার পাশ থেকে নয় অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করবে এমন শর্তছিল দরপত্রে।
কিন্তু ঠিকাদার তা না করে রাস্তার পাশের জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করেছে। এতে করে যে কোন সময় তা আবার ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
১৪.৭ কিলোমিটার সেই পথের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ বিষয়ে শুক্রবার একাত্তর টিভিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রচার হয়।
রোববারই (১৩ জুন) বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন নাটোরের জেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু সাঈদ। বিচারক তার আদেশে বলেন, দন্ডবিধির ১৯০(১) এর গ ধারা অনুযায়ি কোন অপরাধ হয়েছে এমনটা মনে হলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রনোদিত হয়ে তা আমলে নিতে পারে।
নাটোর জজ কোর্টের সরকারি কৌসুলি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম আদালতের বরাত দিয়ে বলেন, একাত্তর টিভি ও প্রথম আলোর সংবাদ দুটি বিশ্লেষণ করে আদালতের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়েছে যে, নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজে ঠিকাদারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অন্য স্থান থেকে মাটি আনার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে গর্ত খুঁড়ে মাটি তুলেছে এবং সরকারি সড়কের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিসাধন করেছে। যা দন্ডবিধির ৪৩১ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়া ঠিকাদাররা কার্যাদেশের শর্ত লংঘন করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করার জন্য সড়ক ও জনপথ তথা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অপরাধমূলক, বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণামূলক কাজ করেছে, যা দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারার অধীন দন্ডনীয় অপরাধ।
নাটোরে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেসনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত তাঁর আদেশে অপরাধটি কাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করে আসামিদের শনাক্ত করা, সাক্ষিদের জবানবন্দি গ্রহণ, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র প্রস্তুত, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাগজাদি জব্দ ও সরকারি রাস্তার পাশ থেকে কত ঘনফুট মাটি তোলা হয়েছে এবং তাতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এই অনিয়মের সাথে যদি আরো কেউ জড়িত থাকে তাদেরকেও তদন্তের মাধ্যমে সামনে আনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই তদন্ত কাজে নাটোরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পিবিআইকে সার্বিকভাবে সহায়তা করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
একই সাথে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে প্রথম আলো ও একাত্তর টেলিভিশনের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের জবানবন্দি গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্তকাজে সার্বিক সহযোগীতা দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) নাটোরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) বরাবর পাঠানো হয়েছে। আগামি ৩০ জুনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নাটোরের পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, তিনি আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলার তদন্ত করে যথা সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আদালত তদন্তকারি কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করার আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া আদালতের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার কথাও নিশ্চিত করেছেন তিনি।