নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হামছাদী গ্রামে দুটি গাছের খুঁটিকে প্রায় ৩০০ বছর ধরে পূজা অর্চনা করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার এ পূজাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী মেলা। স্থানীয়দের মাঝে এ মেলার নাম ‘পাগলা গাছের মেলা’।
পাগলা গাছের মেলা উপলক্ষে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামে শত শত পাগল ভক্তদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে মুখরিত। মেলা প্রাঙ্গণে হস্ত কারুশিল্প ও বিভিন্ন খাবার সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা।
সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পাগলা গাছের পূজার প্রধান পুরোহিত তপন চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার হামছাদী গ্রামে প্রায় ৩০০ বছর ধরে দুটি গাছের খুঁটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে পূজা অর্চনা করে আসছে।
কথিত আছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে স্থানীয় সুরেন্দ্র সেন ও ফনি সেন দুই ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি গাছের খুঁটি ক্রয় করে নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে। এক রাতে সুরেন্দ্র সেন ও ফনি সেন দুই ভাই স্বপ্নে দেখেন ফনি সেনের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পাড়ে তাদের ২০টি খুঁটির মধ্যে দুটি খুঁটি পড়ে আছে। ওই খুঁটি দুটিতে মহাদেবের অদূরভাব বসে পাগল আকারে রূপধারণ করেছে। দিনটি ছিলো বাংলা সনের পহেলা জ্যৈষ্ঠ। তখন থেকেই স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকজন ওই দুটি খুঁটির পূজা করে আসছেন।
প্রতি বছর পুকুর থেকে খুঁটি দুটি উঠিয়ে ডাঙ্গায় এনে দুধ, কলা, ঘি, ফল-ফলাদি ভোগ দেয়াসহ পাঠা বলি দিয়ে পাগলের নামে উৎসর্গ করেন ভক্তরা। পরে আবার এগুলোকে পুকুরে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ চন্দ্র শীল বলেন, মহাদেব রূপে থাকা খুঁটি দুটি পাশের একটি পুকুরের পানির নিচে থাকে। বাংলা বছরের জ্যৈষ্ঠ মাসের এক তারিখে পুকুরে থাকা ওই খুঁটি দুটি ভেসে ওঠে এবং তখনই সনাতন ধর্মাবলম্বী পাগল ভক্তরা পুকুর থেকে খুঁটি দুটি উঠিয়ে ডাঙ্গায় এনে দুধ, কলা, ঘি, ফল-ফলাদি ভোগ দেয়াসহ পাঠা বলি দিয়ে পাগলের নামে উৎসর্গ করেন।
ভক্তরা খুঁটিকে ভক্তি করার জন্যই প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করেন।
মেলা উপলক্ষে মেলার বটমূলে তিন দিনব্যাপী দেশের বিভিন্ন এলাকার বাউল শিল্পী ও পাগলদের পরিবেশনায় পালাগান, বাউল গান, জারি, সারিগান, গীতাপাঠ, কীর্তন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মেলায় বসেছে মিঠাই মণ্ডাসহ বাহারি পণ্যের দোকানের পসরা। বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি প্লাস্টিকের খেলনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পুণ্যার্থীরা মেলায় অংশ নেন।