বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রবল বর্ষণে প্রাণ গেল দুটি বকবাড়ির তিন শতাধিক বক ছানার। ছানাগুলোর হঠাৎ মৃত্যুতে বক পরিবারে পড়েছে শোকের ছায়া। সন্তান হারানোর বেদনায় দিশেহারা মৃত শিশু বকের মা- বাবা।
বেদনার্ত ভীত-সন্ত্রস্ত বকেরা ১২ বছরের পুরানো বসতভিটা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে অজানা পথে। সব মিলিয়ে শরণখোলার বকবাড়ি পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে।
বকবাড়ির মালিক উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ি গ্রামের আঃ মান্নান খান জানান, ২০০৯ সালের বৈশাখ মাসের এক পড়ন্ত বিকেলে দুটি সাদা বক এসে বাসা বেঁধেছিল তার বাড়ির একটি মেহগনি গাছে। তাদের নতুন সংসারে জন্ম নেয় এক জোড়া বক ছানা। তারা আট মাস ধরে বসবাস শেষে বাচ্চাদের নিয়ে পাড়ি জমায় তাদের পুরানো আবাসে।
পরের বছর একই সময় হাজির হয় ১০ জোড়া বকের একটি দল। তার পরের বছরগুলোতে বকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে সেখানে বকের সংখ্যা দাড়ায় সহস্রাধিক।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় বঙ্গবন্ধু মাচাং তৈরি করে যুবলীগ নেতা বহিষ্কার
মান্নান খানের বাড়ির মেহগনি,আম, নারকেল আর শিমুল গাছে বসে সাদা বকের মেলা। প্রকৃতিপ্রেমিক সৌন্দর্যপিপাসু মানুষেরা নিয়মিত ছুটে আসেন বকবাড়িতে বকের মেলা দেখতে।
প্রতিদিন সকালে বকেরা সাদা মেঘের ডানা মেলে খাদ্যান্বেষণে ছুটে যায় সুন্দরবনসহ ভোলা-বলেশ্বর নদী তীর ও স্থানীয় মাঠে বিলে। বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে বাসায় ফেরে দুপুরে আর সন্ধ্যায়। এভাবে বেশ সুখেই দিন চলছিলো বক পরিবারের সদস্যদের।
কিন্ত গত ২৪ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই চার দিনের অবিরাম বর্ষণের কবলে পড়ে বক বাড়ির তিন শতাধিক বক ছানার নির্মম মৃত্যু হয়। প্রবল বৃষ্টিতে শীতার্ত হয়ে এবং বাসা ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে মারা যায় বাচ্চাগুলো। দেড় শতাধিক বকের বাচ্চা মাটি চাপা দেন মান্নান খান।
এছাড়াও, তাফালবাড়ি বাজার সংলগ্ন দীপক মাস্টারের বক বাড়ির প্রায় দেড়শ' বকের বাচ্চা একই সময় একইভাবে বৃষ্টি আর ঝড়ে গাছ থেকে পড়ে মারা যায়। তাদের বাড়ির মৃত বাচ্চাগুলো খাবার হয়েছে শিয়াল কুকুরের। কিছু মৃত ছানা এখনো পড়ে আছে বাগানে। কিছু ভাসছে বেড় পুকুরের পানিতে।
আরও পড়ুন: ১৭ জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৩৮ জনের মৃত্যু
দীপক কুমার জানান, বকবাড়িতে ধ্বংসলীলা বয়ে গেছে। শোক আর ভয়ে অনেক বক এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে দূরদূরান্তে। আগের মত ঝাঁকে ঝাঁকে বক আর দেখা যায়না। প্রকৃতিপ্রেমিক শিক্ষক ও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বক পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাখিদের মেলা ভেঙ্গে গেছে। চিত্তবিনোদনের জন্য মানুষ বকবাড়িতে ভিড় জমাতো।
স্থানীয় সমাজসেবক শাহজাহান মাতুব্বর, মিজানুর রহমান, জামাল হোসেন জোমাদ্দার, শেখ নাজমুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম হাওলাদার ভারাক্রান্ত মনে বলেন, তিন শতাধিক বকের বাচ্চার মৃত্যুতে এলাকার মানুষের মাঝে শোক বিরাজ করছে। বকবাড়ি ছিলো পাখিপ্রেমিক মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্পট। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে পাখি দেখতে আসতো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তোফাজ্জেল হোসেন জানান, অতিবর্ষণে শীতার্ত হয়ে বাচ্চাগুলো মারা যেতে পারে। এ ছাড়া এলাকা দীর্ঘ দিন থেকে প্লাবিত থাকায় বকেরা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। খাদ্যাভাবেও বকের ছানা মারা যেতে পারে।
একাত্তর/এসজে