নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা কমপ্লেক্স ও এতিম খানায় খাবারের বিষক্রিয়ায় এক ছাত্রের মৃত্যু ও ১৭ জন মাদ্রাসা ছাত্র অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার ছয় শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান।
এর আগে, গতকাল সোমবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা কমপ্লেক্স ও এতিম খানার রাতের খাবারের খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নুর হাদী নিশান (৯) উপজেলার একই গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা ও এতিম খানার নূরানী বিভাগের প্রথম ছাত্র ছিল।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার ছয় শিক্ষককে মঙ্গলবার ভোর রাতে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এছাড়া আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিহত শিশুর পরিবারকে থানায় ডাকা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার জানান, নিহতের পরিবার অভিযোগ দিলে পুলিশ পরবর্তী আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিম খানার সুপারিনটেন্ড ইসমাইল হোসেন জানান, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে মাদ্রাসায় মাংস রান্না করা হয়। একই দিনে এশার নামাজের পরে মাদ্রাসার আবাসিক বিভাগের ২০জন ছাত্র ওই মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৮জন ছাত্র অসুস্থ হয়ে সবাই পেট ব্যাথায় বমি করতে থাকে। এ সময় মাদারাসার একজন আবাসিক শিক্ষক বিষয়টি অবহিত করে এবং একজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককে মাদরাসায় ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে অসুস্থ ১৮জন ছাত্রকে কয়েক ধাপে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার মোট শিক্ষার্থী ১২০ জন। প্রথম ধাপে ১৮ জন রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকিরা ওই খাবার আর কেউ খায়নি। এ মাদ্রাসায় মোট ৭০জন শিক্ষার্থী দৈনিক খাবার খায়। অসুস্থদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানায়, মাংসে একটু গন্ধ ছিল। অসুস্থদের মধ্যে নিশান মাদ্রাসাতেই মারা যায়।
আরও পড়ুন: খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এতিমখানা ছাত্রের মৃত্যু, ১৭ জন হাসপাতালে
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়া (ফুড ফয়জনিং) এর কারণে রাতের খাবার খেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের মধ্যে নিশান নামে এক মাদ্রারাসা ছাত্রকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও ১৭জন মাদ্রাসা ছাত্র গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
একাত্তর/আরবিএস