বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের সুমন মিয়া’র মেয়ে ১০ বছরের শিশু নুসরাত জাহান নোহা। স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর ৩য় শ্রেণিতে পড়ার সময় গত বছর সে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়।
এতে তার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক নোহাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সবার সামনে মারধোর ও গালমন্দ করেন।
সেদিন (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নোহার বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শিক্ষক সুমন পাইককে অভিযুক্ত করে পরের দিন আগৈলঝাড়া থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে নোহার বাবা সুমন মিয়া একটি মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে, নোহা আত্মহত্যা করেনি, বরং তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে আদালতে নোহার বাবা সুমন মিয়া, সৎ মা ঝুমুর জামান ও ফুফু লিপি বেগমকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন নোহার মা।
তবে, বিজ্ঞ আদালত ওই মামলার তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলা নথিভূক্ত করা এবং ওই পর্যন্ত নথির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। তারপর থেকে এই এক বছর মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত ছিল।
আরও পড়ুন: ‘পোশাক শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার’
সম্প্রতি নোহার মৃত্যুর ময়নাতদন্ত রির্পোট হাতে পায় পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, হত্যা নয়, বরং নোহা আত্মহত্যাই করেছিলো।
এ রহস্য উন্মোচন হওয়ার পর আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে স্কুল শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।
নোহার বাবা সুমন মিয়া জানিয়েছেন, মামলা দায়েরর পর থেকে বিভিন্ন সময় তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়ে আসছেন শফিকুল ইসলাম সুমন পাইকের লোকজনসহ ওই স্কুল কমিটির সদস্যরা। আপোস মিমাংসার মাধ্যমে একাধিকবার মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়। এতেও মামলা না তুলে নেয়ায় প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদান করে ওই স্কুল কমিটির লোকজন।
আরও পড়ুন: সাত বছরেও পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চডুবি মামলার বিচার হয়নি
এমনকি, নোহার মা’কে ঢাকা থেকে এনে বাবা সুমন মিয়া, সৎ মা ঝুমুর জামান ও ফুফু লিপি বেগমকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করানো হয়।
আপোস মিমাংসা ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে স্কুল কমিটির সভাপতি শাখয়াৎ হোসেন মুঠোফোনে একাত্তরকে জানান, মারধরের কারণেই নোহা আত্মহত্যা করেছে এটা সঠিক নয়। সকালে স্কুলে বসে মারধর করার পর দুপুরে বাড়িতে বসে নোহা আত্মহত্যা করে। এটা পারিবারিক কারনেও হতে পারে।
তবে, স্কুলে বসে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে স্কুল থেকে ওই শিক্ষককে বহিস্কার করে রেজুলেশন করা হয়েছে। কিন্তু স্কুলের সুনাম নষ্ট করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করায় ওই শিক্ষকের জামিনের পর উচ্চ আদালতে নোহার বাবার নামে মানহানি মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম সুমনের দাবি, ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসানো হয়ছে। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনাটির পোস্টমর্টেম রির্পোট হাতে পেয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত ওই স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।