সব কিছুর মেয়াদকাল বলে একটা কথা কথা আছে। মানুষ, কি যন্ত্র- সবার রয়েছে নির্দিষ্ট আয়ু। ব্যতিক্রম নয় বছরের পর বছর যানবাহন পারাপার করে আসা ফেরিগুলো।
সম্প্রতি ফেরি আলোচনায় এসেছে পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত হানার কারণে। একবার নয় পর পর তিনবার এমন ঘটনায় ফেরির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
অনুসন্ধানে জানা গেলো, দুই আলোচিত ফেরি কাকলী ও শাহজালালের আয়ু শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বৃদ্ধ হলে যা হয়, যন্ত্রের মতিগতি ঠিক থাকে না। আর এই কারণেই দিকভ্রান্ত হয়ে এই দুই ফেরি ধাক্কা খেয়েছে পদ্মা সেতুর দুই পিলারে। এর মধ্যে একটি পিলারেই আঘাত লাগার ঘটনা ঘটেছে দুইবার।
আইন অনুযায়ী ফেরি কাকলীর নৌপথে চলাচলের মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত বছর আগে। শাহজালালের মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে এক বছর আগে।
বিষয়টি অবগত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি। উল্টো বলির পাঠা করা হচ্ছে ফেরি চালকদের।
গেলো ১৩ আগস্ট বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরি কাকলী ধাক্কা দেয় পদ্মা সেতুর দশ নম্বর পিলারে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় চালক আব্দুল বাতেনকে।
১৯৭৪ সালে তৈরি হয় ফেরি কাকলী। নৌযান আইন অনুযায়ী কোন নৌযান ৪০ বছরের বেশি চলাচল করতে পারবে না। বর্তমানে কাকলীর বয়স ৪৭ বছর।
নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী ২০১৫ সালেই মেয়াদত্তীর্ণ হয় ফেরিটি। কিন্তু আইনের কোন তোয়াক্কাই করেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ কর্পোরেশন।
কোন কাগজপত্র ছাড়াই মেয়াদউত্তীর্ণ জরাজীর্ণ ফেরি দিয়েই উত্তাল পদ্মায় সাত বছর ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
অথচ ফেরীটি উত্তাল পদ্মায় চলাচলের উপযোগী নয়, তা ১১ আগস্ট চিঠি দিয়ে জানান ফেরির মাস্টার। তারপরও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একই অবস্থা পদ্মা সেতুর পিলার ধাক্কা দেয়া আরেক ফেরি শাহজালালেরও। নৌযান আইন অনুযায়ী এই ফেরিও চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে এক বছর হলো।
দুর্ঘটনার পর এই ফেরির চালককেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মেয়াদউত্তীর্ণ ফেরি কেন চলাচল করছে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করলেও তারা কোন উত্তর দেয়নি।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে চলাচল করা ফেরি এনায়েতপুরের সার্ভে হয়নি সাড়ে চার বছর। ফেরি শাহ পরানের সার্ভে সনদ নেই সাত বছর।
ফেরি কেরামত আলীর ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন মাস। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে কেন ফিটনেস কাগজ ছাড়াই চলছে ফেরিগুলো, জানতে চাইলে গাফলতির কথা স্বীকার করেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: যমুনা ও পদ্মায় পানি বাড়ছে, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
লাইসেন্স দেয়া প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর জালাল উদ্দিন বলেন, নৌযান আইনে বলা আছে ৪০ বছর শেষে কোন ফেরিই চলাচল করবে না।
পুরানো এসব ফেরিতে নতুন ইঞ্জিন ব্যবহার কিংবা মেরামত করা হলেও তার সনদ দেয়া হবে না। বিআইডব্লিউটিসির এমন গাফলতির কারণে বলির শিকার হচ্ছেন ফেরি চালকরা।
একাত্তর/আরএ