হঠাৎ করে দেখলে মনে হতে পারে টঙ্গীর ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে বাড়ি ফেরার কোন দৃশ্য নয়! আসলে তা নয়, কর্মজীবী মানুষের ঘরে ফেরা দৃশ্য। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাড়ি করে নিতে আর আপন ভিটার মাটির গন্ধ নিতে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরার দৃশ্য।
ঘটনাস্থল জয়দেবপুর রেল স্টেশন। বুধবার রাত ১১টায় ছাড়বে ঈদের স্পেশাল ট্রেন। তবে তার আগেই স্টেশনের দুই প্লাপফর্মের পাশেই হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষের ভিড়। যাদের বেশিরভাগই গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। সেদিনই মিলেছে ঈদের বেতন-বোনাস।
এরপরই তারা ছুটে গেছে মার্কেটে প্রিয়জনের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে বিভিন্ন মার্কেটে। সব কাজ শেষ করে যথাসময়ে হাজির জয়দেবপুর রেলস্টেশনে। যে করেই হোক ধরতে হবে ঈদের স্পেশাল ট্রেন। সিট না পেলেই ক্ষতি নেই, দরকার হলে পুরো পথই পাড়ি দিতে রাজি দাঁড়িয়ে কিংবা বাঁদুড় ঝুলা হয়ে।
ঈদের ঘরমুখো এসব মানুষের যাত্রা সহজ করতেই প্রতি বছরের মতো এবারও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত স্পেশাল ট্রেন রেখেছিলো। এবার একটির পরিবর্তে রাখা হয় তিনটি। সাত, আট আর নয় এই তিন দিন জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় স্পেশাল ট্রেন।
এই ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে রওনা করে নাটোর, সান্তাহার, জয়পুরহাট, বিরামপুর ও ফুলবাড়ী হয়ে সর্বশেষ স্টেশন পার্বতীপুর পৌঁছায় ভোরে। বুধবার রাতে অবশ্য দুই ঘণ্টারও বেশি বিলম্বে রাত একটার পর ওই ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। কারণ উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরতেই দেরি করেছিলো ট্রেনটি।
এই ট্রেনের যাত্রী ছাড়াও চাপাই এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য সব ট্রেনের জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষকে এই স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোন কোন ট্রেনের ছাদে চড়ে গাদাগাদি করতে করতে লোকজন ছুটে গেছেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে।
তবে এই বিশেষ ট্রেন পেয়ে পোশাক শ্রমিকরা খুবই খুশি। তারা বলছেন, বিশেষ ট্রেনটি দেয়া না হলে তাদের হয়তো অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে বাসে যেতে হতো। মাত্র চারশ’ টাকার মত খরচ করে বিশেষ ট্রেনে চড়ে পার্বতীপুর পর্যন্ত যেতে পারছেন তারা। আর তা না থাকলে হয়তো তাদের অনেক ভোগান্তিও হতো।
পার্বতীপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনটিতে মোট আসনসংখ্যা ছিল ৭১৬টি, যার মাঝে প্রথম শ্রেণির ২৪টি। বরাদ্দকৃত সব টিকেট কেবলমাত্র অনলাইনে পাওয়া গেলেও আসনবিহীন টিকেট ট্রেন ছাড়ার দুই ঘন্টা পূর্বে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে দেয়া হয় টিকেট। আসন সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়েই ছুটে গেছে বিশেষ ট্রেনটি