সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবেশ বাড়ছে। বিজিবি ও পুলিশের একের পর এক অভিযানে বিপুল জব্দ হলেও বন্ধ হচ্ছে না মাদকের চোরাচালান। ইয়াবা, ফেনসিডিল, ভারতীয় মদসহ বিভিন্ন মাদক প্রতিদিনই দেশে ঢুকছে এই সীমান্ত দিয়ে। এমন অবস্থায় চরম উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয়রা।
পুলিশের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বারঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তর কুল গ্রামে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হন কাদির ও মুকুল নামে দুই ভাই। তাদের বসতভিটা থেকে উদ্ধার হয় প্রায় দেড় কোটি টাকার মাদক। আটক মধ্যে মুকুল স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
একাত্তর খোঁজ নিয়ে জেনেছে, জকিগঞ্জের নোয়াগ্রাম, আইওর, মৌলভীর চক, মুন্সিবাজার, আমলশীদ, দিঘালিগ্রাম, উত্তরকুল, সহিদাবাদ, লোহারমহল, লক্ষ্মীবাজার ও মাসুম বাজার এখন মাদক প্রবেশের প্রধান রুট। এই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসা মাদক ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জকিগঞ্জ সীমান্তে মাদক পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও নৌকা। তবে এ সব অটোরিকশার বৈধ কাগজপত্র নেই। বিজিবি ও পুলিশ টের পেলেই চালকরা গাড়ি বা নৌকা ফেলে পালিয়ে যায়। ফলে শুধু মাদক ও যানবাহন জব্দ হলেও মূল কারবারিরা থেকে যাচ্ছেন আড়ালে আবডালে।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাদকের এমন কারবারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলছে। ধরা পড়ছে বিপুল মাদকও।
১৯ বিজিবি জানিয়েছে, প্রতি রাতে সুরমা- কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। গত সপ্তাহে বিজিবির এক অভিযানে ১৫ লাখ টাকার ভারতীয় মদসহ একটি নৌকা আটক করা হয়।
১৯ বিজিবির এক সদস্য একাত্তর কে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। প্রতিদিনই মাদক ধরা পড়ছে, কিন্তু কারবারিরা নতুন নতুন কৌশল করছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবির অভিযান চলছে।
মাদকের কারবার নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের পাশাপাশি পাওয়া গেছে অন্য ধরণের অভিযোগও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললে অনেকে ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ সাজানো মামলার ফাঁদেও পড়ছেন। এ কারণে অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পান।
বারঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তরকুল গ্রামের ফয়েজ আহমদ নামরে এক ব্যক্তি একাত্তরকে বলেন, আমরা চাই মাদক বন্ধ হোক। কিন্তু কথা বললেই সমস্যা হয়। আমি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম, যার কারণে আমাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এরপর থেকে অনেকেই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে না।
জকিগঞ্জ সীমান্ত মাদকের সহজ প্রবেশপথ হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস একাত্তরকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা এক কোটিতে পৌঁছাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিজিবি বা পুলিশের অভিযান যথেষ্ট নয়। মাদক বন্ধে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা।
জকিগঞ্জ সীমান্তের মাদক প্রবাহ বন্ধ না হলে এটি শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। মাদকের ভয়াবহতা রুখতে এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সিলেট বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিজিবি জকিগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে এবং পর্যায়ক্রমে সবাইকে আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। তবে মাদক নির্মূলে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।