আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়লে, উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। এতে কারখানা বন্ধের শঙ্কায় পড়েছেন উদ্যোক্তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এ খাতে লুটপাটের সুযোগ বাড়াবে।
কেপিসি স্বত্বাধিকারী কাজী সাজেদুর রহমান, কাঁচামালে ৬১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, এলসি জটিলতা আর ডলার মূল্যবৃদ্ধির বোঝার চাপে মাঝারী থেকে এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। তিনি বলেন, আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হবে। এই খরচ দিয়ে টিকে থাকতে পারবো কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা অধিকারকর্মী অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গণশুনানির পরিবর্তে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি জনগণের প্রতি অবিচার আর প্রতারণা। আর এভাবে ভোক্তার বোঝা বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুৎ উতপাদন খাতে লুণ্ঠন করার সুযোগও তৈরি করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বলা যেতে পারে আমরা শেষ সময়ে পৌঁছে গেছি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতাহীন বিনিয়োগকারী আর সরকারের মালিকাধীন কোম্পানিগুলোর মুনাফা হলো। তাদের এই অন্যায় ও অযৌক্তিক আয় বৃদ্ধিকে এভাবে সরকার সুরক্ষা দিতে দিতে আমরা আজ এই পর্যায়ে এসেছি। এতে ভোক্তাদের অধিকার বঞ্চিত হলো।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতাই নেই। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফিতি আরও বাড়বে, ফলে মানুষের ভোগান্তিও বাড়বে।
তিনি বলেন, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগামী। সেখানে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সবক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। এর কারণে মূল্যস্ফীতির ওপরে একটা নতুন চাপ আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও ভোক্তা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ভোক্তা পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ করে বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এবার দাম বাড়তে পারে সাত থেকে আট শতাংশ।
এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল) ব্যবহার করা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৪ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে। আর ক্যাপটিভ বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।