রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পাল্টে গেছে দেশের পোশাক কারখানার চিত্র। শ্রমিকের কর্মপরিবেশ যেমন নিরাপদ হয়েছে, তেমনি এই খাতে এসেছে নিত্য নতুন বিনিয়োগ। কিন্তু এতো কিছুর পরও পোশাকের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না গার্মেন্টস মালিকরা। অথচ পরিবেশবান্ধব কারখানায় তৈরি বাংলাদেশি পোশাক কম দামে কিনে, বেশি দামে বিক্রি করছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
আশুলিয়ার রপ্তানিমুখী অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের কারখানার কর্মপরিবেশ নিরাপদ হয়েছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা আর নির্দেশনায়। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব থেকে সুরক্ষিত পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে এখানে বিনিয়োগ সাধারণ কারখানার তুলনায় দ্বীগুনেরও বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ভালো সরবরাহকারী হয়ে বেশি ক্রয়াদেশ টানতে দেশি এবং আন্তর্জাতিক প্রায় ১২ থেকে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মানসনদও নিয়েছে কারখানাটি। সেসবের জন্যই বছরে বাড়তি খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা।
একই রপ্তানিকারকের চার কারখানার মধ্যে দুটি লিড সনদপ্রাপ্ত পরিবেশবান্ধব, অন্য দুটি এখনও সনদ পায়নি।
গোলাম মোস্তফা হতাশ। কারণ বিদেশি বায়াররা অর্ডার বেশি দিলেও উন্নত আর অনুন্নত কারখানাকে সমান দরে অর্ডার দিচ্ছে।
রপ্তানিকাররকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, চলতি বছরে শ্রমিক ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধিসহ গেলো পাঁচ বছরে পোশাক খাতে গড় উৎপাদন খরচ ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এখন বাড়ছে ব্যাংক ঋনে সুদের হারও।
সংগঠনটির সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, বিজিএমইএ এর হিসেবে এই সময়ে বাংলাদেশি পোশাকের গড় প্রকৃত রপ্তানি মূল্য যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে মাত্র ১.৭৬ শতাংশ এবং ইউরোপে ৫.৬১ শতাংশ।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের কাছে অবশ্যই আমরা ন্যায্য মূল্যের ব্যাপারে কথা বলবো, ইউনিফার্ড কোড অব কন্ডাক্টের কথা বলবো। অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইসের কথা বলবো।
পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমই এবং বিকেএমইএ এর সদস্য কারখানা চালু আছে এখন প্রায় তিন হাজার। বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টিতে এখন সব কারখানায়ই কর্মপরিবেশ মোটামুটি নিরাপদ। উপরন্তু দেশে খুব উন্নত এবং বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব কারখানা ২১৫। যা বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। কিন্তু এতো অর্জনের পরও কেন পোশাকের ন্যায্যমুল্য পাওয়া যাচ্ছে না?
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের উদ্যোক্তারা একজন আরেকজনের বিপক্ষে এক ধরনের অলিখিত প্রতিযোগিতা মধ্যে পড়ে যাচ্ছে তাদের ওভার ক্যাপাসিটির জন্য। যেটা আমাদের বায়াররা জানেন কোন কোন কারখানায় অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি রয়েছে। বায়ররা এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি একজন আরেকজনের বিপক্ষে ব্যবহার করে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় দেশে পাঁচ হাজার কারখানা চালু থাকলেও এরপর কম্প্লায়েন্সে বিনিয়োগের বোঝা বইতে না পেরে বন্ধ হয় অর্ধেকেরও বেশি। যদিও এতে রপ্তানি বন্ধ হয়নি বা কমেনি পোশাকের মজুরিও তেমন বাড়ায়নি বায়াররা।