ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। যদিও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দাবি সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মজুরি ২৫ হাজারের।
এদিকে ট্যানারি মালিকরা বললেন, ব্যবসায় মন্দা, তাই এত টাকা বেতন দেয়া সম্ভব নয়।
২০২২-২৩ অর্থ-বছরে ১.২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে শুধু প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি থেকে আসে ১২৩ মিলিয়ন ডলার। আর তৈরি পোশাকের পরেই রপ্তানিতে দ্বিতীয় খাত হলো চামড়া শিল্প।
তবে এ খাতের শ্রমিকরা এখনও অবহেলিত। স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই খাতে শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু চামড়া খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এখন ১২৩ ডলার বা ১৩ হাজার ৫শ’ টাকার সমান। যা ভারতে ১৪৬ ডলার, ভিয়েতনামে ১৭১, ইন্দোনেশিয়ায় ১৮৬ এবং থাইল্যান্ডে ২৫৫ ডলার।
ট্যানারি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এই আলোচনায় সিপিডি বলছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করে সুষম খাদ্য ও নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিতে ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ২২ হাজার ৭শ’ ৭৬ টাকা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, চামড়া খাতের পরিবেশ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও এ খাতের মজুরি নিয়ে আলোচনা কম হয়। সুতরাং মজুরি বৃদ্ধি পেলে এ শিল্প খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
তবে, ট্যানারি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দাবি ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। প্রস্তাবটি ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ ও মজুরি বোর্ডের কাছে দেয়া হয়েছে।
অবশ্য ট্যানারি মালিকরা বললেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি কমে গেছে আর ভালো দামও পাচ্ছেন না তারা। ফলে ২৫ হাজার টাকা মজুরি দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় সিপিডির এমন প্রস্তাবনা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর কারণ, আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে এবং রপ্তানিতে চামড়ার ইউনিট মূল্য কমেছে।
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান বললেন, মালিক-শ্রমিক দুই পক্ষের সাথে বসেই একটা যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণ করবেন তারা।
ট্যানারি শিল্পের মজুরির বিষয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, মালিকপক্ষ বলেছে এত পরিমাণে (সিপিডির প্রস্তাব অনুযায়ী) মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মজুরি বোর্ডে আলোচনা করে দেখা হবে মজুরি কতটা বাড়ানো সম্ভব, যাতে শিল্প টিকে থাকে আর শ্রমিকরাও বাঁচে।
তবে বাস্তবতা হলো, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৩ হাজার ৫শ’ টাকাই এখন দেন না ৬০ শতাংশ ট্যানারি মালিক।