প্রতিবছরই বাজেট পেশ করার দিন সরকারের অর্থমন্ত্রী হাতে এক লাল ব্রিফকেস নিয়ে আসেন। যা প্রতিবছরই পুনরাবৃত্তি হতে দেখছি আমরা।
কি কি থাকে এই ব্রিফকেসে? কোথা থেকে এলো এই লাল ব্রিফকেস রীতি?
প্রতিবছর জুনের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হয় দেশের পরবর্তী অর্থবছরের আয় ও ব্যয়ের হিসেব পরিকল্পনা। আর একমাত্র সেই দিনেই বাজেট পেশের সময় সরকারের অর্থমন্ত্রীর হাতে থাকে একটি লাল ব্রিফকেস। অর্থমন্ত্রী বদলালেও রয়ে যায় এই ব্রিফকেস রীতি।
নানা দেশের অর্থমন্ত্রীরা বাজেট উপস্থাপনের দিন এই ব্রিফকেস রীতি পালন করেন। রঙ বদলালেও রয়ে যায় ব্রিফকেস।
ব্রিফকেসের যাত্রাটা শুরু হয় উনিশ শতকে যুক্তরাজ্যে। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন লাল একটি স্যুটকেসে করে বাজেট সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে আসেন। পরবর্তিতে বহু সরকারের আমলেই এই ব্রিফকেস ব্যবহার হয়।
বাজেট শব্দের সাথে এই ব্রিফকেস শব্দের একটি যোগসূত্র রয়েছে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরনো ফরাসি শব্দ ‘ব্যুজেট (বোগেট)’ থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো, থলে বা ব্যাগ। আগের সময়ে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশের বাজেট প্রস্তাবে ব্রিফকেসের ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায় আকবর আলি খানের ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ বইয়ে। বইটিতে উল্লেখ রয়েছে যে, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে জায়গা পায় ব্রিফকেস রীতি।
বইটিতে ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ বলা হয় বাজেটে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা। তবে ব্যাতিক্রম কিছু করেছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২১ সালে। ব্রিফকেসের প্রথা ভেঙে লাল মোড়কে মোড়ানো ট্যাবলেট নিয়ে সংসদে বাজেট বক্তৃতা দেন তিনি।
আমাদের দেশের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য এবার প্রথমবারের মত বাজেট উপস্থাপন করবেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবারও কি তিনি আগের অর্থমন্ত্রীদের মতই লাল ব্রিফকেস নিয়ে আসবেন নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জনের উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসবেন কোন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস?