দেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে, অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের আয়োজনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেটের উন্মুক্ততা নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিবেদনটির ফলাফল ২ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হবে। এ সময় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ এখনও কেন বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও প্রশ্ন রাখেন, যদি আমরা দুর্নীতির পাহাড় থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে না পারি, তবে আমরা কেমন বিপ্লব করেছি? তিনি বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারলে কর সংগ্রহে ইতিবাচক পদক্ষেপ আসবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, এই সম্পদ কোথায় গেল। এই সম্পদ কেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার অধিগ্রহণ করল না। এ ছাড়া লুণ্ঠনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের ব্যাংক ঋণ আছে, তা সমন্বয়ের জন্য তাঁদের সম্পত্তি কেন দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ করা হলো না।
এমন পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এটি করা গেলে মানুষের কর দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দাতা সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের সন্দেহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বড় প্রকল্পে দাতা সংস্থা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অর্থায়ন করেছেন। তারা উদ্বিগ্ন এই প্রকল্পগুলো চলবে কিনা। তারা জানতে চান, আগামী দিনে বাংলাদেশ কীভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
জানুয়ারিতে দাতা সংস্থা ও সরকারের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে দেবপ্রিয় দুই মাসের মধ্যে ‘ফোরাম ফর ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, এই ফোরাম তৈরি করে দাতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যার প্রথমটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্য বিষয়গুলো হলো– ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, জ্বালানি সংকট সমাধান, সরকারি অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করে দ্রুত প্রকল্প সম্পন্ন করা এবং সঠিকভাবে কর সংগ্রহ নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. এম এ রাজ্জাক। আর ওপেন বাজেট সার্ভের ওপর এক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ড. এম আবু ইউসূফ। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আনারুল কবির ও প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।