সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
 

গত ১৫ বছরে দুর্নীতির ১০০ টাকার ৬০ টাকাই পাচার

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম

পূর্বে দুর্নীতির একটা বড় অংশ দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে উল্লেখ করে বিগত ১৫ বছরে ১০০ টাকা দুর্নীতি হলে, ৬০ টাকাই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা জানান, হুন্ডি করে নয়, প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই তছরুপ হয়েছে। মেগা প্রকল্পে যে লুটপাট হয়েছে তা কয়েক প্রজন্ম ধরে শোধ করতে হবে।

সোমবার সকালে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এর আগে রোববার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। সে সঙ্গে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করেছেন। বিগত সরকারের আমলে চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো। আর এর উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে যে ভোট হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম করা যাবে না। পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কি কি উদ্যোগ নেবে, সেগুলোকে স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এ সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দু’বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশ নিয়ে কাজ করি। আমি বলতে চাই, এটা (বাংলাদেশে) এলডিসি গ্রুপে থাকার মতো দেশ না। আমাদের সক্ষমতা, যোগ্যতা, স্থায়িত্ব, কার্যকারিতা এসব দিয়ে এলডিসি গ্রুপে থাকার মতো কারণ নেই।

তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্য নিরসনে যে অর্জন তা টোকা দিলেই ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশের অবস্থা এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি বা স্বল্পোন্নত দেশ) গ্রুপে থাকার মতো না। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে। এর থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন।

চোর ধরা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজ নয় জানিয়ে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের কাজ চুরির বর্ণনা দেওয়া। শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোষ খোঁজা নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এই কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা।

তিনি বলেন, ৯০ দিনে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ২২ বার সভা করেছি। ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, কমিটির প্রতিটি সদস্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। বিদেশি পরামর্শক এনে শ্বেতপত্র করা হলে অন্তত ২৫ কোটি টাকা খরচ হতো। দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে কমিটি এটি করেছে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টের গ্রন্থস্বত্ব স্বয়ং বাংলাদেশ সরকার। এটিকে সরকার নিজস্ব দলিল হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বলেন, পূর্বে দুর্নীতির একটা বড় অংশ দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ১০০ টাকা দুর্নীতি হলে ৬০ টাকায় দেশ থেকে পাচার হয়েছে। এসব পাচার হুন্ডি করে নয়, বরং প্রকল্পের মাধ্যমে এসব টাকা পাচার হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই তছরুপ হয়েছে।
তারা বলেন, জ্বালানি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রচেষ্টা বাদ দয়ে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। প্রযুক্তি খাতেও উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি হয়েছে। মূলত বিভিন্ন পলিসি তৈরি করে দুর্নীতি করা হয়েছে।

তারা বলেন, মেগা প্রকল্পে যে লুটপাট হয়েছে তা কয়েক প্রজন্ম ধরে শোধ করতে হবে। তাই বৈদেশিক ঋণের সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড এগুলো নিয়ে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। ঋণ পুনর্বিবেচনার কোনও বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি দেশের রাজস্ব বাড়াতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।

শ্বেতপত্র কমিটি বলেন, বাংলাদেশের পদ্ধতিগত সংস্কার দরকার। হিসাব-নিকাশ, তথ্য-উপাত্তে ওপরের পর্যায়ে যে হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি সেটির সবকটি দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের সময়ে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।

রোববার প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিকখাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়। আমাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলিনি।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে সেই মাসের ২৮ তারিখ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এআরএস
অর্থ পাচারকারীরা শয়তানের মতো। তারা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেন। আবার সেই টাকা প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স হিসেবে দেশে ঢুকিয়ে সরকারের প্রণোদনা হাতিয়ে নেন।
এ বছরের মধ্যেই বিদেশে পাচার হওয়া প্রায় কয়েকশ কোটি ডলার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 
দেশের শীর্ষ অলিগার্কদের ব্যাংক লুট, কর ফাঁকি আর অর্থপাচারের গা শিউরে ওঠা সব বর্ণনা দিলেন দুই আয়কর কমিশনার। চট্টগ্রামভিত্তিক ‘ব্যাংকখেকো’ শিল্পগ্রুপ এস আলমের ব্যাংক লুট বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ক্যাম...
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক হয়েছিলেন সাবেক ওসি মোস্তফা গোলাম কুদ্দস, তার দুই মেয়ে, ছেলেসহ পরিবারের সাতজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে রিজিওনাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ অর্জন করেছেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা।
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ছয় হাজার ৫৫৮ জন। বুধবার (১৮ জুন) রাত ১০টার দিকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়। 
জাপান সরকার ও অন্যান্য বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কয়লা ও এলএনজি প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদীচী সংক্রান্ত খবরে উদ্বেগ জানিয়েছেন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীরা।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত