বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রকৃত ব্যয় ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের পরিমাণ অবিলম্বে নির্ধারণ করে জড়িতদের শাস্তির আওতার দাবি জানিয়েছেন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের খরচ হিসাব করে মুনাফাবিহীন পরিচালনা এবং উন্নয়ন নীতির ভিত্তিতে সেবা খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে গণমাধ্যমের সাথে সংলাপে তিনি এসব কথা জানান।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনের যেসব প্রকল্প নিয়েছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ আছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে বসিয়ে রেখে খরচ বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কিনতে বাধ্য হয়েছে মানুষ।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সাথে সংলাপে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম লুণ্ঠনমূলক এসব প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা একদল লুণ্ঠনকারী তৈরি করেছি এবং রাষ্ট্র জ্বালানি খাতকে লুণ্ঠনের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করেছে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় লুণ্ঠনকারীরা লুণ্ঠন করে যাচ্ছে। সেখানে ‘এনার্জি রাইটস’ ও ‘এনার্জি জাস্টিস’- এই দুটো জিনিসকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, তিনি বলেন, এই দুটো জিনিস প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে আমাদের মূল অন্তরায় ছিল সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার); যিনি লুণ্ঠনের মূল অধিনায়ক। সেই অধিনায়কের যখন বিদায় হয়ে গেছে, তখন সেই জায়গাটা ঠিক করার সুযোগ তৈরি হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়েও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভে রাখার লক্ষ্য থেকে বের করে খরচের হিসাব অনুযায়ী পরিচালিত করলে জনগণের খরচ কমবে বলেও জানান তিনি।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, ‘আমরা কিছু করব না’। অর্থাৎ, সরকার কিছু করবে না। জনগণের জন্য তারা ফ্যাসিলিট্যাটেড করছে এবং সেই সুযোগ তারা সৃষ্টি করেছে। সেই সুযোগ ব্যবহার করে জনগণ তাদের পরিবর্তনগুলো নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নিকট জনগণের দাবি- ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল অবধি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আমদানি বা উৎপাদন, সঞ্চলন বা পরিবহন ও বিতরণে প্রকৃত ব্যয় এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের পরিমাণ অবিলম্বে নির্ধারণ করতে হবে।
জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার মধ্যে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা সংরক্ষণের লক্ষ্যে লুণ্ঠনমুক্ত ব্যয়ে ভোক্তার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জন্য ক্যাবের পাঁচটি চাওয়া তুলে ধরে তিনি।
দাবিগুলো হল:
- বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ২(২) (ক) ও (খ) ধারা বাতিল করা।
- কস্ট প্লাস নয়, কস্টভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পরিচালনা এবং উন্নয়ন নীতির ভিত্তিতে বাণিজ্যিক নয়, সরকারি সেবাখাত হিসেবে এ খাতের সংস্কার করা।
- পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহসহ সকল এনার্জির সব পর্যায়ের ব্যয় হার ও মূল্যহার গণশুনানির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারণ এবং ২০১২ সাল থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত আটকে রাখা ৩টি প্রবিধান কোনোরকম পরিবর্তন না করে অবিলম্বে গেজেট প্রকাশ করা।
- এ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং সরকারি কোম্পানি বা সংস্থাসমূহের চেয়ারম্যান, সদস্য ও শীর্ষ পদসমূহে নিয়োগ প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে করার লক্ষ্যে এক বা একাধিক প্রবিধান প্রণয়ন ও বিইআরসি আইন সংস্কার করা।
- বিদ্যমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৮ ও বিইআরসি আইন ২০০৩-এর আওতায় জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করা।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান (রাজু) উপস্থিত ছিলেন।