৫৪ বছরেও সঠিক পথে চলতে পারেনি দেশের অর্থনীতি। আর্থ-সামাজিক খাতের কিছু সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও অর্থনীতিতে ঝুঁকিটাই বেশি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ফুটে উঠেছে অর্থনীতির ভগ্নদশার চিত্র। অথচ গেলো পাঁচ দশকে কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অনেক দেশই সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কেনো পিছিয়ে?
বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস এলেই প্রশ্ন ওঠে জোরেশোরে, যে প্রকৃত মুক্তির জন্য লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছে সেই অর্থনীতি টেকসইভাবে কতোটা এগুলো?
বাংলাদেশের মাত্র ছয় বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করে তখনকার এশিয়ার জেলে পল্লী নামে খ্যাত সিঙ্গাপুর। আর বাংলাদেশেরও চার বছর পর মার্কিন আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয় ভিয়েতনাম। এই দুটি দেশই এখন অর্থনীতি, সুশাসন ও জীবনমানে উন্নয়নের টেকসই উদাহরণ।
আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জন্ম নিলেও সে অনুযায়ী এগোতে পারেনি বাংলাদেশ। রাষ্ট্রচিন্তাবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমানের মতে, সমশ্রেণীর অনেক দেশ যে পথে দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে, সে পথে একপা এগিয়ে আর দুই পিছিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে বাংলাদেশ।
তিনি আরও জানান, গড় আয়ু, শিক্ষা-স্বাস্থ্য আর রেমিট্যান্স ও গণিতের গড়ে মাথাপিছু আয়ে কিছু উন্নতি হলেও অর্থনীতিতে এখনো ঝুঁকিই বেশি। বড় ঝুঁকি এখন মূল্যস্ফীতি। বিদেশি ঋণের বোঝা, অর্থপাচার, ব্যাংক খাতে লুটপাট, ব্যবসার অনুপযুক্ত পরিবেশ অর্থনীতিকে বড় সংকটে ফেলেছে। যার অনিবার্য ফল নাগরিকদের আয়-সম্পদ ও ভোগ তীব্র বৈষম্য।
আর ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেছেন, বেসরকারি খাতের মাধ্যমেই বড় হয়েছে দেশের অর্থনীতি। বিজয়ের ৫৪ বছরে পরে এসে এখন দেখা যাচ্ছে সেখানেই বেশি সংকটে । এর কারণও স্পষ্ট। রাজনীতির হালুয়াভোগী, পতিত সরকারের লুটপাটের সহযোগী অনেক উদ্যোক্তা এখন কারাগারে বা দেশে থেকে গোপনে পালিয়ে আছেন। এখন রাজনৈতিক আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে ঝুঁকি বাড়ছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায়।
তবে অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান এবং রাষ্ট্রচিন্তাবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হক এখন বলছেন, জুলাই বিপ্লবে প্রস্ফুটিত পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা মেনে বাস্তবসম্মত সংস্কার হলে অর্থনীতি ফিরতে পারে ইতিবাচক ধারায়। অবশ্য এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় আছে।
বিশ্লেষকরা এখানেই একমত যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক এবং ব্যাপক পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যতে আবার ঝুঁকিতে পড়বে অর্থনীতি।