সময় ও খরচ বাঁচাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ কিংবা ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে মালদ্বীপকে বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রচলিত পথ ঢাকা, কলকাতা, কলম্বো বা সিঙ্গাপুরের পরিবর্তনে পোশাক রপ্তানিকারকদের পছন্দের রুট ঢাকা থেকে মালে।
সমুদ্র পথে মালদ্বীপে পণ্য নিয়ে সেখান থেকে কার্গো বিমানে রপ্তানির কাজ সারছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডরা বলছেন, বিদেশে ডলারে বিল পরিশোধে ব্যাংকের নানা জটিলতাই, এমন পরিস্থিতি তৈরির অন্যতম কারণ। সব মিলয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড।
দ্রুত সময়ে পণ্য গন্তব্যে পাঠাতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ব্যবহার করতো ঢাকা ও কলকাতা বিমান বন্দর। তবে ঢাকা বিমানবন্দরে কার্গো আগের তুলনায় কম আসা এবং ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতের বিভিন্ন বন্দরে বাংলাদেশি পণ্যে অগ্রাধিকার লোড-আনলোড পাচ্ছে না।
দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কারখানাগুলো আবার চালু হলে পণ্য জাহাজীকরণের চাহিদা বেড়ে যায়। ঢাকার শাহজালালে বিমানবন্দরে ড্রাই কার্গো শিপমেন্টের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। পণ্য রপ্তানিতে বেঁধে দেয়া সময়সীমা পূরণে মরিয়া হয়ে ওঠায় জাহাজীকরণ সংকট দ্রুত দূর করতে ব্যবস্থা নিতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে অন্য রুটে পণ্য পাঠানোর খরচ বেশি হওয়ায় মালদ্বীপের রুটটি সামনে চলে আসে। বিকল্প হিসেবে এখন সমুদ্র পথে মালদ্বীপে নিয়ে সেখান থেকেই কার্গো বিমানে পণ্য রপ্তানি করছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। এতে করে পণ্য পরিবহনের খরচেও সাশ্রয় হচ্ছে।
তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, ঢাকা ও কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠানোর খরচও বেশি। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে মালদ্বীপ দিয়ে পণ্য পরিবহনের ফলে ইউরোপের দেশগুলোয় প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে প্রায় এক ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর এডি শাখার অসহযোগিতায় বকেয়া পড়ে থাকায় অনেক কার্গো বিমান তাদের বাংলাদেশ কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত করেছে, ফলে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে তৃতীয় দেশ দিয়ে।
তিনি আরও জানান, পরিচালন খরচ, শুল্ক ও ঝুঁকির কারণে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যয়বহুল। সেখানে স্ক্যানিং মেশিন ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (ইডিএস) মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব। এছাড়াও, পণ্য পরিবহনে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগকারী পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ারলাইন্স নেই।
এছাড়া অন্যান্য রুটে পণ্য পাঠানোর খরচ বেশি হওয়ায় মালদ্বীপের রুটটি সামনে চলে আসে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, মালদ্বীপে দিয়ে দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়। ঢাকা থেকে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ ছয় ডলার ৩০ সেন্ট থেকে সাড়ে ছয় ডলারে উঠেছিল। এখন সেটিও কমে এসেছে যৌক্তিক পর্যায়ে।
ফ্রেইড ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন বলছে বিদেশি কার্গো বিমানগুলো ঢাকায় আনতে তাদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা এবং এজন্য ব্যাংকিং জটিলতাও কমাতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম লাইভমিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি না করে- তার পরিবর্তে মালদ্বীপের মাধ্যমে পোশাক পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারকের এ পদক্ষেপে ভারতের বিমান ও নৌ বন্দরগুলো বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।