উৎসব পার্বণে অথবা ছুটির দিনে গরুর মাংস পাতে তুলতে কঠিন দশবার ভাবতে হয় দেশের মানুষকে। উচ্চবিত্তের নাগালে থাকে সবকিছুই। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে শোনা যায় শত যুক্তি। কখনও বাজার সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের জিম্মি করা আবার কখনো গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি-লালন পালনে খরচের অজুহাত দেখায় ব্যবসায়ীরা।
২০২৪ সালের সরকারি তথ্য বলছে, বর্তমানে দুই কোটি ৩০ লাখ গরু আছে দেশে। আর কোরবানির সময় প্রায় আট থেকে ৯০ লাখের মতো গরুর চাহিদা থাকে। বেসরকারি হিসেবে বছরে প্রায় ৪০-৫০ লাখ গরুর চাহিদা বাংলাদেশে।
সোমবার ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় যে সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ করেছেন তা রীতিমতো বিষ্ফোরক। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বিগত সরকারে কারণে কম দামে গরুর মাংস জোটেনি দেশের গরীব মানুষের ভাগ্যে।
এক সময় ব্রাজিল থেকেও গরুর মাংস আমদানির কথা উঠেছিলো। তবে ব্রাজিল প্রস্তাব দেবার পরও সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি শেখ হাসিনা সরকার। ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ে এই বিস্ফোরক তথ্য দেন।
অনেক মুসলিম প্রধান দেশও ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি করে থাকে। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বহুবার আবেদন করে গরুর মাংস রপ্তানির সনদ পায়নি। ব্রাজিল বলেছিলো, প্রতি কেজি গরুর মাংস বাংলাদেশকে সাড়ে চার মার্কিন ডলারে রপ্তানি করতে চেয়েছিলো। তাহলে সব মিলিয়ে ৫০০ বা ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস খেতে পারতো বাংলাদেশের মানুষ। ব্রাজিল গরুর মাংস রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর প্রথম স্থানে চীন। ব্রাজিলে গরুর সংখ্যা ২৩ কোটির মতো।
সর্বশেষ গত এপ্রিলেও লাতিন আমেরিকার দেশটি প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলা টাকায় যা ৪৯৫ টাকায় রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিলো। ওই মাসে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে ঢাকায় এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছিলো কূটনীতিক সূত্রগুলো।
ব্রাজিল যখন বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দেয়, তখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস কমবেশি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলো। সনদ বা সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য তিনি কীভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন, এ সম্পর্কেও কথা বলেন পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।
তিনি জানান, প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে তাকে বলা হয়েছিলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যান ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা। যদিও এখন অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী রাষ্ট্রদূত।
একাত্তর/আরবিএস