গেলো এক বছরে ৫০ হাজার একর জমিতে বেড়েছে তামাক চাষ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে দেশে ১ লাখ ৪২ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়। তামাকপাতা রপ্তানিতে থাকা ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাবেই সিগারেট কোম্পানিগুলো চাষ বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিগত সরকারের নীতি সহযোগিতায় বিশ্ববাজারে তামাক রপ্তানি করে কোম্পানিগুলো শত কোটি টাকা মুনাফা লুটছে তখন হুমকির মুখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
২০২৩ সালে দেশে তামাক চাষ হয় ৯৩ হাজার একর জমিতে। ২৪ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার একর। অর্থাৎ এক বছরেই চাষ বেড়েছে ৫০ হাজার একর জমিতে। এই তথ্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।
কেনো হঠাৎ এতোটা বাড়লো তামাক চাষ? ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০০ টাকার প্রক্রিয়াজাত করা তামাক রপ্তানিতে সরকার শুল্ক পেতো ২৫ টাকা। বহুজাতিক কোম্পানিকে সুবিধা দিতে পরের বছর এই শুল্কের পুরোটাই প্রত্যাহার করেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশরারফ হোসেন ভূইঞা।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম সাত্তার মণ্ডল এবং ঢাকা আহসানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য ও ওয়াশ) ইকবাল মাসুদের মতে, শুল্ক ছাড় সুবিধা পেয়ে কৃষকদের সাথে চুক্তি করে একের পর এক চাষের জমি বাড়ায় কোম্পানিগুলো।
এ ছাড়া বাংলাদেশের তামাক পাতা সবচেয়ে সস্তা। প্রতিবেশী ভারতে প্রতি কেজি তামাক পাতার ২.৪৪ ডলার। পাকিস্তান ২.৩৯ ডলার, চীনে ২.৭০ ডলার ব্রাজিলে ৩.৫০ ডলার। আর বাংলাদেশে মাত্র ১.৬৮ ডলার।
জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, এ কারণে সিগারেট রপ্তানি পাশাপাশি বাংলাদেশের ধান-চাল ও সবজির জমিতে তামাক চাষ বাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকার মুনাফা করছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো। বিপরীতে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ।
২০১৭ সালের অপিল বিভাগের এক রায়ে বলা হয় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক চাষের জমি কমিয়ে আনতে হবে। নতুন করে কোনো বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে অনুমতি দেয়া যাবে না।
অথচ বর্তমান সরকারে দুটি তামাক কোম্পানিকে সিগারেট ও ই-সিগারেট উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া ফিলিপ মরিস নামের একটি কোম্পানি নতুন অনুমতি পেতে যাচ্ছে।
প্রতি বছর ঘরবাড়ি নির্মাণসহ অকৃষিখাতে এক শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে কুষ্টিয়ায়,রংপুর, লালমনিরহাট,বান্দরবানসহ তামাক চাষের শীর্ষ ১০টিই জেলাই রয়েছে, শীর্ষ দরিদ্রতম জেলার তালিকায়।