আগামী বাজেটে আয়কর খাতে আসছে অর্ধশতাধিক পরিবর্তন। কিছু ক্ষেত্রে কর যেমন বাড়ছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে কমানোও হচ্ছে। ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে তুলে দেয়া হচ্ছে পাঁচ শতাংশ করের স্ল্যাব। করদাতার ওপর চাপ কমাতেও কিছু পরিবর্তন আনছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। পুঁজিবাজার বিকাশেও আছে কয়েকটি ইতিবাচক প্রস্তাব। পুঁজিবাজারের উন্নয়নকে টেকসই ও গতিশীল করতে থাকছে বেশ কিছু পদক্ষেপ।
ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর, প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলোতে কর আইনের এমন নানা বিষয়ে আপত্তি জানান বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্টরা। আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে আসছে বাজেটে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি কর আদায় বাড়াতেও থাকছে কিছু প্রস্তাব।
ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর, জুলাই যোদ্ধার করমুক্ত আয়ের সীমা হচ্ছে সোয়া ৫ লাখ টাকা। ব্যক্তির কর নির্ধারণেও আসছে পরিবর্তন। করের ৫ শতাংশের স্ল্যাব বাতিল হচ্ছে। ফলে কর হবে আয়ের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। অঞ্চলভেদে ন্যূনতম করের বিধানও বাতিল হচ্ছে। সারাদেশে সবার ন্যূনতম আয়কর পাঁচ হাজার টাকা। আর নতুন করদাতাকে উৎসাহ দিতে ন্যূনতম কর এক হাজার টাকা করা হচ্ছে।
শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বেশকিছু প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। বড় সুবিধা পাচ্ছে মার্চেন্ট ব্যাংক। এ ধরনের কোম্পানির কর সাড়ে ৩৭ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ২২.৫ শতাংশ থাকছে। তবে কঠোর শর্ত শিথিল হচ্ছে। এ সুবিধা পেতে শুধু আয় হতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজের উৎসে কর কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হচ্ছে।
কোম্পানি ও করদাতাদের দাবি মেনে নিয়ে অতিরিক্ত কর পরের বছরগুলোতে সমন্বয় করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কৃষি আয় পাঁচ লাখের বেশি হলে কর হবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের করমুক্ত ব্যয় ৫০ হাজার টাকা বাড়ছে। দ্বিগুন হচ্ছে পারকুইজিট সীমা। বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি আপন ভাই-বোনের মধ্যে দানও করমুক্ত হচ্ছে।
কিছু ক্ষেত্রে কমানো হচ্ছে উৎসে করহার। ঠিকাদারের উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে ৫ করা হচ্ছে। কৃষিপণ্য সরবরাহে উৎসে কর অর্ধেক হচ্ছে। জমি বিক্রিতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ৫ শতাংশ কমিয়ে ১৩ করা হচ্ছে। তবে ১৫২টি পণ্য আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট সেবার উৎসে কমিয়ে কর হচ্ছে পাঁচ শতাংশ ও সিগারেট কোম্পানির উৎসে কর বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল অপরেটরের টার্নওভার কর কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া রিসাইকল শিল্প, গ্যাস বিতরণ, তেল পরিশোধনাগার, বিদ্যুৎ কেনায় উৎসে কর কমানো হচ্ছে।
মৎস ও পোল্ট্রি খাতের কর অব্যাহতি বাতিল করা হচ্ছে। তবে প্রান্তিক খামারীদের উৎসাহ দিতে এখাতের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকছে। সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। উৎসে করের রিটার্ন প্রতিমাসের পরিবর্তে তিন মাস পরপর দিতে হবে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড পাওয়াসহ ১২ সেবা পেতে রিটান জমার প্রমাণ দেখানোর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। কর নিবন্ধন থাকলেই মিলবে এসব সেবা।