বাজেট আসলে সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন কোন পণ্যের দাম বাড়ছে বা কমছে। সরকারের রাজস্ব পরিকল্পনায় বিভিন্ন পণ্য শুল্ক বা কর বাড়ানোর প্রভাবে এবারো বাড়ছে বেশ কিছু পণ্যের দাম।
দেশীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতে কর অব্যাহতি ব্যাপকভাবে তুলে নেয়া হবে। ফলে দাম বাড়তে পারে মোবাইল ফোন, ইলেক্ট্রনিক্স হোম অ্যাপলায়েন্স, টয়লেট্রিজ, এলপিজি সিলেন্ডার লিফট এয়ারকন্ডিশনার কম্প্রেসারের।
সাড়ে সাত থেকে বাড়িয়ে শুল্ক হার ১০ শতাংশ করায় দাম বাড়বে নির্মাণ সামগ্রীরও। যেমন ডুপ্লেক্স বোর্ড, কোটেড কাগজ, সিমেন্ট, শিট, এম এস প্রোডাক্ট, স্টিল।
সরকার মনে করছে, এতে অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়তে পারে দেশের বস্ত্র খাতে।
বর্তমানে তুলা ও কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনে কেজিপ্রতি ৩ টাকা হারে ভ্যাট দিতে হয়, যা ৫ টাকায় বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি তুলা আমদানিতে দীর্ঘদিনের শূন্য কর সুবিধা তুলে দিয়ে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে দেশীয় উৎপাদন চরম সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিজিটাল অর্থনীতিতেও আসতে পারে বড় পরিবর্তন। যেমন অনলাইন পণ্য বিক্রিতে ভ্যাট তিনগুণ বেড়ে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে ফলে দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও বিক্রেতারা চাপে পড়বেন।
অনলাইন স্ট্রিমিং ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপরও এবার ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে ফলে এ সেবার খরচ বাড়বে।
হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের জন্য ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে দাম বাড়বে স্ক্রু, নাট বল্টু বৈদ্যুতিক লাইনের যন্ত্রাংশ, ব্লেডের দাম।
বাড়বে কাগজের দামও ভ্যাটের হার ৭.৫ শতাংশ এর পরিবর্তে নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৫ শতাংশ।
মোবাইল ফোন উৎপাদনে বর্তমানে ২, ৫ ও ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয় যা বাড়িয়ে ৪, ৭.৫ ও ১০ শতাংশ করা হতে পারে। তবে এই হার দুই বছরের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
এবার যেসব পণ্যের দাম কমছে। পরিবেশবান্ধব শিল্প যেমন ইলেকট্রিক বাইক এবং মাটি, পাতা-ফুল-কাণ্ড দিয়ে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল পণ্যের নির্মাতারা বিশেষ কর-ছাড় পেতে পারেন।
ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় দাম কমবে স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ, বলপেন, যাত্রী পরিবহনের বিমা ভাড়া এবং সম্পূরক শুল্ক আইসক্রিমের দাম কমবে।
এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখা হতে পারে। এতে করে আমদানির পর্যায়ে নয়, সরবরাহের ধাপে ভ্যাট আরোপ হতে পারে। মোবাইল ফোন কোম্পানির জন্য উৎসে কর কমানো হতে পারে।
ঠিকাদারদের ক্ষেত্রে এই হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং কৃষিখাতে চাল, গম ও আলুসহ ২৭টি পণ্যের ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।
জমি রেজিস্ট্রেশনের করহার ৪, ৬ ও ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩, ৪ ও ৬ শতাংশ করার পরিকল্পনা আছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পের কাঁচামালে কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
গ্যাস বিতরণ কোম্পানির উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে ০.৬ শতাংশ এবং তেল পরিশোধন কোম্পানির কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করার চিন্তা রয়েছে।ইন্টারনেট সেবায় কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিলের কর ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটরদের কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করা হতে পারে।
৩০ ইঞ্চি মনিটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে বড় মনিটরের দাম কমবে। এছাড়াও খরচ কমবে টায়ার উৎপাদনে বাস কিংবা মাইক্রবাস আমদানির শুল্ক কমছে।
এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখা হতে পারে। এতে করে আমদানির পর্যায়ে নয়, সরবরাহের ধাপে ভ্যাট আরোপ হতে পারে, কমবে পেট্রলিয়ামের দামও।
কৃষি খাতে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বাড়তে পারে। কম্বাইন্ড হারভেস্টের যন্ত্রাংশ আমদানির শুল্ক কমবে। কীটনাশক ও দাগমুক্ত ফলের জন্য ফ্রুট ব্যাগ আমদানিতে শুল্ক কমবে।