প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদের সময় কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে অস্থিরতা অব্যাহত। সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও বিক্রি হয়েছে অনেক চামড়া। বিপরীতে বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বরাবরের মতোই চড়া।
ট্যানারি মালিক, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী, প্রস্তুতকারী, ভোক্তা সবার অভিযোগে ঘুরে ফিরে এসেছে এখাতে অনিয়ম, নজরদারির অভাব আর দুর্বল ব্যবস্থাপনার কথা।
দেশের তৃতীয় প্রধান রপ্তানির এই শিল্পের দিকে আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি স্বাস্থ্যবান গরুর চামড়া এ বছর বিক্রি হয়েছে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে দেশে প্রস্তুতকৃত একজোড়া ভালো মানের চামড়ার জুতার দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা। অর্থাৎ একজোড়া জুতার দামে ৬ থেকে ৮টি গরুর চামড়া কেনা যায়। কিন্তু কেন, ভোক্তা মনের সরল প্রশ্ন।
ভোক্তাদের অভিযোগ, দুই দিক থেকেই ঠকছেন তারা। কাঁচা চামড়া বিক্রির সময় যেমন পান না ন্যায্য দাম, তেমনি চামড়াজাত পণ্য কিনতে গিয়েও গুনতে হয় চড়া মূল্য।
চামড়াজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবু হানিফ সরকার বলেন, চড়া দামে চামড়া কিনে পণ্য বানাতে হয়। তাই কম দামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয় না।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, দামের সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি হয় ট্যানারি থেকেই। ট্যানারি মালিকরা একদিকে অধিক মুনাফা করে অপর দিকে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধেও গড়িমসি।
এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদের দাবি, প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ ও কেমিক্যাল আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় কম দামে চামড়া দেওয়া সম্ভব নয়।
সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার এখনো পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় মিলছে না আন্তর্জাতিক মানের সনদ। ফলে বিদেশি বাজারেও বাংলাদেশ পিছিয়ে।
দেশীয় বাজারে দাম বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ডা. সবুর আহমদ
কাঁচামাল থেকে চূড়ান্ত ব্যবহার উপযোগী পণ্যের দামের এমন অস্বাভাবিক পার্থক্য দেশীয় বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ভোক্তারা ঝুঁকছে বিদেশি পণ্যের দিকে।