বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ নেমেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারে নিচে। তিন বছর আগেও এই রির্জাভ ছিলো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
চলতি মাসের শুরুতেও ব্যবহারযোগ্য রির্জাভ ছিলো ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে। গত কয়েকদিনের অস্থিরতায় রির্জাভ আরো কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে টানা ১৫ বছরের শাসনামল শেষে দেশে ঠিক কী পরিমাণ রির্জাভ রেখে গেছেন আওয়ামী লীগ সরকার তা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব পদ্ধতির হিসাবে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে রির্জাভ।
আইএমএফ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার একটি নীতিমালা জারি করে এর নাম দেওয়া হয়েছে বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) । বিশ্বে এটি বিপিএম-৬ নামেই পরিচিত।
রিজার্ভ হিসাবের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। একটি হচ্ছে গ্রস, অন্যটি নিট হিসাব। আইএমএফ এর পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক সম্পদ গণনায় সকল বৈদেশিক দায় ও ঋণ এবং রিজার্ভের অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা মূল রিজার্ভ থেকে বাদ যাবে।
টানা পতনের পর চলতি বছরের জুনে এসে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছিলো। গত ২৯ মে বিপিএম-৬ অনুসারে দেশের রির্জাভ ছিলো ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। ৩০ জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে। এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল রেমিট্যান্সের বড় প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া ঋণ।
কিন্তু এক মাস না যেতেই আবারো নাজুক অবস্থায় রিজার্ভ। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এরমধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
রির্জাভ এই অবস্থায় রেখে সরকারের পতন হয়। এরপর ৭ আগস্ট থেকে কর্মীদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান ও উপদেষ্টা পদত্যাগে বাধ্য হন। এর পর পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান অস্থিরতায় রিজার্ভের যথাযথ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। রিজার্ভের অর্থের নিরাপত্তায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে তা ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উঠে। আর ২০২০ সালের ৮ অক্টোবরে রির্জাভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট রেকর্ড ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে উঠে যায়।
তবে সেই সুদিন বেশি দিন থাকেনি। ২০২২ থেকেই রিজার্ভ কমতে থাকে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কমায় ডলার সঙ্কটে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে ২০২৩ সালে। যদিও সরকারের পতনের আগে কয়েক মাসে রিজার্ভ মজুদে কিছুটা উন্নতির দাবি করা হয়।