মনিরুজ্জামান বাবু
ভাবুন এমন একটি শহরের কথা যেখানে নেই রাজনীতি, দারিদ্র্য, অপরাধ। এমনকি নেই টাকার নোটও।
দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বসবাস করতে পারে সেখানে। কল্পনার রাজ্য মনে হলেও বাস্তবেই এমন এক শহর রয়েছে ভারতের তামিলনাড়ুতে।
অরোভিল ফরাসীতে যার অর্থ ভোরের শহর। ভোরের আলোর মতোই শুভ্র, ছিমছাম এক শহর এই অরোভিল। তামিলনাড়ুর ভিলুপুরাম জেলায় অবস্থিত।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা ‘দ্য মাদার’ নামে খ্যাত মিরা আলফাসা। আর এই শহরটির নকশা করেন স্থপতি রজার এঙ্গার।
ব্যতিক্রমী এই শহরের গড়ার পেছনে মূল দর্শন ছিলো দেশ, শহর, জাতীয়তা, রাজনীতি, বর্ণের ভেদাবেধ ভুলে নারী পুরুষের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক শান্তির ও প্রগতির চর্চা এবং উদ্ভাবন।
বর্তমানে ৪৯টি দেশের প্রায় ২,৫০০ মানুষ অরোভিলে বাস করেন। এর দুই-তৃতীয়াংশই ভারতীয়। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের মানুষই আছে এই শহরে।
তবে অরোভিলে ৫০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রতি বছর প্রায় ৫,০০০ পর্যটক এই বিশেষ শহর দেখতে আসেন।
শহরের একদম কেন্দ্রে রয়েছে মাতৃমন্দির। ১৪০০ সোনার চাকতি দিয়ে মোড়া এই মন্দির। শহরটির বাইরের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে সবুজ গাছপালার গ্রিন বেল্ট।
এর ভেতরের অংশে রয়েছে সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক এলাকা। থাকার জন্য আবাসিক এলাকার পাশাপাশি রয়েছে শিল্প এলাকাও।
আরেভিলে নেই কোনো কাগজের নোট বা ধাতব মুদ্রার প্রচলন। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে থাকা অরোকার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। শহরের খরচের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ আসে বাইরের অনুদান থেকে।
বিদ্যুতের জোগানের জন্য এখানে আছে অগণিত সোলার প্যানেল। অপরাধ এখানে হয় না বললেই চলে। তাছাড়া অ্যালকোহোল পানেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আধুনিক জীবনের রঙিন মোড়কের বাহিরে গিয়েও আধুনিক জীবন যাপন এখানে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ। কে থাকতে চাইবে না এমন স্বপ্নের শহরে।