প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সুচন্দা, খসরু ও বঙ্গবন্ধু অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’ মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে।
১৯৭৩ সালের একদিন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র সংগ্রামের শুটিং চলছিল। সিনেমার শেষ দৃশ্যের চিত্রনাট্যে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্যালুট করছে। এই দৃশ্য কিভাবে ধারণ করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় পড়লেন ছবির পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম।
স্বাধীনতার আগে খসরু ছিলেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। বীরত্বের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে এরপর তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন তিনি। সেই স্নেহের সম্পর্কের সুবাদেই সিনেমার শেষ দৃশ্যের একটা ব্যবস্থা করার জন্য পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে নিয়ে নায়ক খসরু সোজা গিয়ে হাজির হলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। সেই মুহূর্তের কথোপকথন চাষী নজরুল ইসলাম বর্ণনা করেছেন। খসরু ও বঙ্গবন্ধুর আলাপটি তুলে ধরা হল পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের বয়ানে।
সংগ্রাম চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য
'খসরু: আপনার কাছে একটা কাজে আইছি।
বঙ্গবন্ধু: কী কাজ?
খসরু: আমরা আর্মির মার্চ পাস্টের একটা দৃশ্য করব। আপনি স্যালুট নিবেন।
বঙ্গবন্ধু: চুপ আমি ফিল্মে অ্যাক্টিং করব না। (ধমকের সুরে)
খসরু: এটা তো অ্যাক্টিং হইল না।
বঙ্গবন্ধু: অ্যাক্টিং হইল না কী? যা এখান থেকে। (আবারো ধমকের সুরে)
খসরু: না, আপনাকে করতেই হবে। আপনি না হলে সিনেমাটা শেষ করতে পারব না।
বঙ্গবন্ধু: মান্নানরে ডাক দেখি। (তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান)
(স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান এসে খসরু ও চাষী নজরুলকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।)
খসরু: বঙ্গবন্ধুরে অ্যাক্টিং করতে হইব।
আবদুল মান্নান: বঙ্গবন্ধু অ্যাক্টিং করব এও সম্ভব?
খসরু: সম্ভব না হইলে কিন্তু আপনারে অ্যাক্টিং এ দাঁড় করাইয়া দিমু। আপনি বঙ্গবন্ধুরে উল্টাপাল্টা কিছু বইলেন না। শুধু বলবেন, অ্যাক্টিং করা যায়। (সবাইকে নিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মান্নান আবার ফিরে গেলেন বঙ্গবন্ধুর রুমে)
বঙ্গবন্ধু: কী তাইলে?
আবদুল মান্নান: ওই ঠিকই আছে। তয় করবেন কবে?'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন কাজটি করে দিতে। খসরুকে বললেন, “যা, করে দেব”
চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সুচন্দা ও খসরু অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রাম মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে।