ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে নতুন করে সমবেত হতে শুরু করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। উপগ্রহের চিত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এক থেকে দুই দিনের মধ্যে কিয়েভের পতন ঘটাতে প্রস্তুত হচ্ছে পুতিনের কমান্ডাররা।
শুক্রবার কিয়েভ অভিযোগ করেছে, রুশ বাহিনী গোটা ইউক্রেb জুড়ে আবারো ভারি গোলাবর্ষন শুরু করেছে। এই হামলায় পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইঝুমের একটি মানসিক হাসপাতাল বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বেশিরভাগ রোগী প্রাণ বাঁচাতে মাটির নিচতলায় আশ্রয় নিয়েছে।
ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনাদের মরদেহের ছবি সম্বলিত পোস্টকে অনুমোদন দেয়ায় ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের উপর মারাত্মক চটেছে রাশিয়া। এই দুই সামাজিক মাধ্যমের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের মেটা প্লাটফর্মকে ‘উগ্রবাদি’ হিসাবে ঘোষণা করতে আদালতের প্রতি আহবান জানিয়েছে মস্কো।
ইউক্রেনের হামলার ষোলতম দিনে এসে রাশিয়া নতুন করে তাদের আগ্রাসন বিস্তৃত করেছে। ইউক্রেনের মধ্যভাগে অবস্থিত দুইটি শহর লুটস্ক ও ডিনিপ্রোতে প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। লুটস্ক শহরের একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরুর দিকে রাশিয়ার একটি বিশাল সামরিক বহর দেশটির রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হবার পথে কাছাকাছি এসে থমকে আছে। পশ্চিমারা ধারণা করছিলো, দ্রুতগতিতে কিয়েভ দখলের পাঁয়তারা ভেস্তে যাওয়ায় থমকে আছে বহরটি।
তবে মার্কিন উপগ্রহ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সারের নতুন চিত্র দেখা যাচ্ছে, কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরের সামরিক বহর টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। সেখানে একটি বিমানবন্দরও রয়েছে। এই বিমানবন্দরেই আশপাশে আকাশ থেকে অবতরণ করে রাশিয়ার একদল প্যারাট্রুপার।
উপগ্রহ চিত্রে আরও দেখা যাচ্ছে, উত্তরের লুভইয়ানকাতে অবস্থান নিয়েছে রুশ সজোয়াঁ যান। সেই সঙ্গে আছে ভারি গোলান্দজ বাহিনীর একটি বহর। এই বহরের কামান ও ট্যাংকগুলোতে গোলা বর্ষণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে ম্যাক্সার।
সব দিক বিশ্লেষক করে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সবশেষ গোয়েন্দা পরিপত্রে জানিয়েছে, রাশিয়া সম্ভবত কিয়েভের দখল নেয়ার প্রস্তুতি শেষ করে আনছে এবং খুব অল্প দিনের মধ্যে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে পুতিনের বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পাল্টা দাবি করেছেন, তার দেশ টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছে গেছে এবং যুদ্ধ জয়ের পথে আছে। তিনি বলেন, কত দিনে যুদ্ধ শেষ হবে সেটা তিনি জানেন না, তবে তাদের বিজয় নিশ্চিত।
জেলেনস্কি বলেন, তারা কৌশলগতভাবে এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে গেছেন, যেখান থেকে রাশিয়াকে টেক্কা দিয়ে জয়ী হবেন তারা। তবে, চলমান এই যুদ্ধ কতদিনে শেষ হবে সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন ইউক্রেনিয় নেতা।
বিপরীতে শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমর পুতিন পাল্টা দাবি করে বলেছেন, ইউক্রেনে সাফল্য পাওয়া ও নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা একটি ভালো দিকে গেছে বলেও মনে করেন রুশ নেতা।
আগের দিন রাতে ইউক্রেনের এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, পোলিস্কি জেলায় তাদের বাহিনী রুশ সেনা বহরকে বেকায়দা অবস্থানে নিয়ে গেছে। বেলারুশ সীমান্তের কাছে এই জেলাতে কিয়েভগামী সামরিক বহরের শেষ মাত্রা রয়েছে।
এদিকে, মারিউপোল শহরে আবারও গোলাবর্ষণ শুরু করেছে রাশিয়া। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এই বন্দর নগরী। চারদিকে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। দিন দিন করুণ হচ্ছে শহরটির পরিস্থিতি। খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে দিশেহারা স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: ফেসবুকের বিরুদ্ধে রাশিয়ার মামলা
এমনকি শিশুদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত খাবার। গত কয়েক দিনের টানা হামলায় শহরটিতে এখন পর্যন্ত ১২শ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন মারিউপোলের উপমেয়র। তার শঙ্কা, খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বেঁচে থাকার নূন্যতম রসদ।
এছাড়া চেরনিহিভসহ বেশ কয়েকটি শহরে এখনো জোরালো অভিযান চালিয়েই যাচ্ছে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত রুশ হামলায় ইউক্রেনের কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে বলে দাবি করছে কিয়েভ।