ইউক্রেনে দীর্ঘ হচ্ছে রুশ অভিযান; রাজধানী কিয়েভসহ নানাস্থানে মাত্রা বাড়ছে হামলার। নতুন করে কিয়েভে আগামী ৩৫ ঘণ্টা কারফিউ জারি করেছে সরকার। ওডেসাতে নতুন করে ভারী গোলা বর্ষণ শুরু করেছে রাশিয়ার নৌবাহিনী।
খারকিভ ও মারিউপোল থেকে তুমুল সংঘর্ষের খবর আসছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, মারিউপোল দখলে নিতে সব চেষ্টাই করছে রাশিয়া। এই দুই শহরে কমপক্ষে দশটি হাসপাতাল গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ার গতি কমে গেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমা গোয়েন্দারা। তবে ইউক্রেন বলছে, দেরিতে হলেও আকাশপথে রাশিয়া তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। তাই সামনের দিনগুলোতে আরো খারাপ সময় আসছে বলে আশঙ্কা করছে দেশটি।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে আবারও ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনার কথা বলেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিছুক্ষণ আগে ইতালির পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, রাশিয়া সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকার শেষ পর্যায়ে চলে গেছে তার দেশ।
তবে তিনি একই সঙ্গে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রুশরা ইউরোপের অন্যান্য অংশে ঢুকে পড়তে পারে। তাই ক্রেমলিনের উপর চাপ প্রয়োগে আরও বেশি বেশি করো নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ অন্যান্য সব ব্যবস্থা গ্রহণের আহবানও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পুতিনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই যে কোন সময় রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলতে পারেন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ইউক্রেন হামলার ২৭তম দিনে আজভ সাগরের তীরে মারিউপোল ঘিরে চারদিক হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। খাদ্য, পানি, ওষুধ পরিবহণ থেকে শুরু করে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই বন্ধ। চারপাশে রুশ হামলায় তছনছ শহরের ধ্বংসস্তূপ আর শহরবাসীর কান্নার আওয়াজ।
আরো হামলার সতর্কতা জারি করে রাজধানী কিয়েভে বুধবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার কিয়েভে একটি শপিংমলে রুশ হামলায় নিহত হয় অন্তত ১০ জন। রাশিয়ার দাবি, মলটি রকেট সিস্টেম সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
কৃষ্ণ সাগরের তীরে ওডেসাতেও মঙ্গলবার ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করেছে রাশিয়ার নেভাল ফোর্স। ধারণা করা হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে রাশিয়া। সে কারণেই তাদের হামলার নতুন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ওডেসা।
পাল্টাপাল্টি হামলায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ একটু নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ছুটছেন এক শহর থেকে অন্য শহরে। যুদ্ধের মধ্যেও সোমবার মানবিক করিডর দিয়ে আট হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে।
এর মধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছে ৩৩ লাখের বেশি মানুষ , যার মধ্যে শুধু পোল্যান্ডে গেছে ২১ লাখের বেশি মানুষ। স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও রাশিয়ায়ও লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে পোল্যান্ডে মাত্রাতিরিক্ত শরণার্থী যাওয়ায় সেখানে আবাসন ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইমরানের ওপর অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট শুক্রবার
এ অবস্থায় যুদ্ধ বন্ধে আবারও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসার ওপর জোর দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানান, ইউক্রেন সেনারা রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যা ইউক্রেনে রাশিয়ার রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে বলে জানান তিনি।
বাইডেন আরো আশঙ্কা জানিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্ব ও আমেরিকাতে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালাতে পারে। তিনি মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুতিনের ধৈর্য্য কমে আসছে, হয়ে পড়ছে অসহিষ্ণু।
একাত্তর/আরএ