প্রথমবারের মতো আফগান তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত সরকার। এই উদ্যোগ ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই ক্রমশ আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থিতিতে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করা তালেবান নেতা মুল্লাহ বরাদরের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
বুধাবার (৯ জুন) নাম গোপন রাখার শর্তে এক ভারতীয় কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই এ আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে তারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, পাকিস্তান ও ইরানের মদদ পাওয়া তালেবান নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে না।
ওই ভারতীয় কর্মকর্তার আরও জানান, পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর মদতপুষ্ট হক্কানি বা কোয়েটা সুরার সঙ্গেও কোনও রকম আলোচনায় যেতে নারাজ দিল্লি। তালেবানের যে গোষ্ঠীগুলি 'জাতীয়তাবাদী' হিসেবে পরিচিত, তাদের জন্যই আলোচনার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। যা গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। তাতে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
এতোদিন কোনোভাবেই তালেবানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চাইত না দিল্লি। নব্বইয়ের দশকে তালেবানি শাসনের সময় তাজিকস-সহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর তৈরি সংযুক্ত ফ্রন্টের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তালেবানকে যুক্ত না করার যে পূর্ববর্তী অবস্থান ছিল এবং নর্দান জোটে যাবতীয় নজর দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি আমরা। যে ফ্রন্টের সমর্থন করেছিল ভারত, রাশিয়া এবং ইরান।
এই পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কিন্তু তারপর থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই মনে করছে যে তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ভালো।
আফগানিস্তানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি আসরাফ ঘানি জানান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইসহ আফগানিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার সঙ্গে সমান্তরালভাবে তালেবানদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে নয়াদিল্লি।
ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে গেটওয়ে হাউসের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক ফেলো সমীর পাটিলের মন্তব্য, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। রাজনৈতিক নিষ্পত্তি ছাড়া কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নাগরিকদের যুদ্ধ নিশ্চিত। সেইসঙ্গে নিশ্চিত যে তালেবানরা কাবুল দখল করবে। তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতেই তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে যেভাবে অনিচ্ছা দেখিয়ে এসেছে ভারত, তা থেকে সরে এসে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। একমাত্র এভাবেই আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা কমিয়ে আনতে পারে।
২০২০ সালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক সজ্জনহার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তালেবান এখন আর আগের মতো কট্টর ইসলামী সংগঠন নেই, এবং ভারতের ব্যাপারে তাদের মনোভাবেও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের তালেবান আর এখনকার তালেবান এক নয়। তারা ইসলামী রাষ্ট্র চায়, কিন্তু একইসাথে সেখানে সবার অংশগ্রহণে তাদের ততটা আপত্তি এখন আর নেই। তারা জানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি তাদের প্রয়োজন।
আফগানিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে মালভূমির উপর অবস্থিত দেশটি। প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ফলে প্রতিবেশি দেশগুলোর চোখে আফগানিস্তান বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
একাত্তর/আরবিএস