ছয় দশক আগে মানুষের মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর থেকে মহাশূন্যে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ জন নভোচারীর মৃত্যু হয়েছে। স্পেসফ্লাইট কতটা জটিল তা বিবেচনা করে, এটি আসলে অসাধারণ যে এত লম্বা সময়ে এত অল্পসংখ্যক মানুষ মহাকাশে প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) ২০২৫ সালে চাঁদে একটি ক্রু এবং পরের দশকে মঙ্গলগ্রহে নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। বাণিজ্যিক স্পেসফ্লাইটও দিনদিন নিয়মিত হয়ে উঠছে। মহাকাশ ভ্রমণ সাধারণ হয়ে ওঠার সাথে সাথে সেখানে যাওয়ার পথে মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
এটি মানুষের মনে একটি মন খারাপ করা কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশ্ন তোলে- যদি কেউ মহাকাশে মারা যায় তাহলে তার মরদেহের কী হবে?
মহাকাশচারীদের সুস্থ রাখার জন্য নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করতে কাজ করে ট্রান্সলেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর স্পেস হেলথ। যদি কেউ নিম্ন-আর্থ-অরবিট মিশনে মারা যায়- যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে- ক্রুরা সেক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি ক্যাপসুলে মৃতদেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে পারে।
আর যদি এটি চাঁদে ঘটে, তবে ক্রুরা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। ইতোধ্যেই এই ধরনের ঘটনার জন্য নাসার বিস্তারিত প্রোটোকল রয়েছে।
এই দ্রুত প্রত্যাবর্তনের কারণে, সম্ভবত শরীরের সংরক্ষণ নাসার প্রধান উদ্বেগের বিষয় নয়। এর পরিবর্তে তাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার হবে অবশিষ্ট ক্রু নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসা নিশ্চিত করা।
তবে মঙ্গলগ্রহে ৩০ কোটি মাইল ভ্রমণের সময় যদি একজন নভোচারী মারা যান তবে বিষয়টি আলাদা হবে। সেই পরিস্থিতিতে, ক্রু সম্ভবত পৃথিবীতে ফিরে আসতে সক্ষম হবে না। তার পরিবর্তে, মরদেহটি সম্ভবত মিশনের শেষে ক্রুদের সাথে পৃথিবীতে ফিরে আসবে, যা কয়েক বছর পরে হবে।
এই সময়ে ক্রু চেম্বার বা বিশেষ বডি ব্যাগে মৃতদেহ সংরক্ষণ করবে। মহাকাশ যানের অভ্যন্তরে স্থির তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দেহকে সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। তবে এই সমস্ত পরিস্থিতি তখনই প্রযোজ্য হবে যখন কেউ স্পেস স্টেশন বা মহাকাশযানের ভেতরে মারা যাবে।
স্পেসস্যুটের সুরক্ষা ছাড়াই যদি কেউ মহাকাশে পা রাখে তবে কী হবে? সেক্ষেত্রে মহাকাশচারী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবেন। চাপ হ্রাস এবং স্থানের শূন্যতার সংস্পর্শে তার পক্ষে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে এবং রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরল ফুটতে থাকবে।
যদি একজন নভোচারী স্পেসস্যুট ছাড়াই চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে পা রাখেন তাহলে কী হবে? চাঁদের বলতে গেলে বায়ুমণ্ডল নেই। যা আছে তাও খুব সামান্য পরিমাণে। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা এবং প্রায় কোনো অক্সিজেন নেই। সুতরাং ফলাফলটি খোলা জায়গায় এক্সপোজারের মতোই হবে: শ্বাসরোধ এবং ফুটন্ত রক্ত।
দাফনের ব্যাপারে কী হবে?
ধরা যাক, মঙ্গলগ্রহে অবতরণের পর মহাকাশচারী মারা গেলেন। সেক্ষেত্রে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা কাম্য নয়; এটির জন্য খুব বেশি শক্তি প্রয়োজন যা বেঁচে থাকা ক্রুদের অন্যান্য উদ্দেশ্যে প্রয়োজন। এবং কবর দেয়াও ভাল বুদ্ধি নয়। মরদেহ থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীব মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠকে দূষিত করতে পারে। এর পরিবর্তে, ক্রু একটি বিশেষ বডি ব্যাগে মৃতদেহটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।
অভিযাত্রীরা কীভাবে মৃত্যুর সাথে মোকাবিলা করবে সে সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানা। এটা শুধু শরীরের সাথে কী করা হবে সে প্রশ্ন নয়। ক্রুদের ক্ষতি মোকাবেলায় সহায়তা করা এবং পৃথিবীতে ফিরে শোকাহত পরিবারগুলোকে সাহায্য করা, মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ পরিচালনা করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: রেকর্ড উষ্ণতায় পৌঁছেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা
কিন্তু সত্যিকার অর্থে অন্যান্য গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করতে- চাঁদ, মঙ্গল বা আমাদের সৌরজগতের বাইরের যেকোনো গ্রহই হোক না কেন- এই ভয়াবহ দৃশ্যের জন্য পরিকল্পনা এবং প্রোটোকলের প্রয়োজন হবে।
লেখক: ইমানুয়েল উরকুয়েটা, স্পেস মেডিসিন এবং ইমার্জেন্সি মেডিসিনের অধ্যাপক, বেলর কলেজ অফ মেডিসিন
একাত্তর/এসজে