গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফার ভেতরের অবস্থা দেখে আঁতকে উঠেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, একটি হাসপাতালের এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কোনদিনই দেখেনি বিশ্ব। গাজার উত্তরে আর একটিও হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়ার উপযোগী নেই বলে শুক্রবার জানিয়েছে সংস্থাটি।
মর্গে থাকা লাশের হিসাব রাখতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে গাজার নাসের হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রতিদিনই এতো বেশি মরদেহ আসছে যে মৃতদের নাম, পরিচয় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহের সংখ্যাও কম নয়। কিছু কিছু মরদেহের অবস্থা শনাক্তের অযোগ্য।
হাসপাতালটির এক কর্মি বলেন, এখানে প্রতিদিন কাজ করার চেয়ে কঠিন কিছু হতে পারে না। প্রতিদিনই বাবা মায়ের সামনে সন্তানের মরদেহ দেখাতে হচ্ছে আমাদের। কিছু কিছু মরদেহ পচে, গলে যাওয়া। রক্তের গন্ধ, বারুদের গন্ধ সারাদিন নাকে লেগে থাকে।
এর ওপর রয়েছে কর্মী সংকট। শুধুমাত্র যাদের পরিচয় শনাক্ত হচ্ছে তাদের স্বজনরা এসে মরদেহ সংগ্রহ করে দাফন করছে। এবং শুধু তাদেরই মৃতের সংখ্যায় যুক্ত করছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাকিদের মরদেহ সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পড়ে থাকছে মর্গের রেফ্রিজারেটরে।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলিরা। সেখানকার আইসিইউ বিভাগের চিত্র দেখে আঁতকে উঠেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ঝুঁকি নিয়ে সেখানে পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, একটি হাসপাতালের ভেতরের এর চেয়ে খারাপ অবস্থা কোনদিনই দেখা যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালের ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। রোগীদেরই জায়গা দেয়ার উপায় নেই। হাসপাতালে মোটে ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এদের সবাই জুনিয়র বা শিক্ষানবিশ। এখানে কোন বিশেষজ্ঞ নেই। তারা আরও বলছেন, রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে, উত্তর গাজার আর একটি হাসপাতালও চিকিৎসা দেয়ার উপযোগী নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কর্মী সংকটে সবকটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখনো প্রাথমিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছে। তবে উত্তর গাজায় আর কোনও সক্রিয় হাসপাতাল নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়াসুস জানান, চিকিৎসক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ মৌলিক সরবরাহের অভাবে উত্তর গাজার কোনও হাসপাতালের কার্যক্রম আর চালানো যাচ্ছে না। আহতদের শল্যচিকিৎসা দিতে সক্ষম উত্তর গাজার সর্বশেষ হাসপাতাল- আল আহলি আরব হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।