তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে- এই প্রবাদটির অন্তর্নিহিত অর্থ হল- মানুষ তার নিয়তির অমোঘ পরিণতি থেকে কোনভাবেই রক্ষা পায় না। ইসরাইলের হয়েছে সেই দশা। মধ্যপ্রাচ্যে বহুবার জন্ম নেওয়ার পরও নিজ ঘরের শক্রুতাতেই বিলীন হয়েছে বারবার। পারস্য সভ্যতার ধারক-বাহক ইরানের পেছনে লেগে থাকার সফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে কট্টর ইহুদিবাদী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজায় হামলা শুরুর মাধ্যমে শুরু হয় ইসরাইলের অস্বাভাবিক আচরণ। এই আচরণ রীতিমতো পাগলামিতে পৌঁছালো যখন ইরানের সরাসরি আক্রমণ করে বসলো। ইরানকে পাল্টা দিতে গিয়ে এমন নাজেহালই হতে হলো যে, লজ্জায় লাল হয়ে নেতানিয়াহুর মুখে টু শব্দটিও নেই। উল্টো তার দেশের মন্ত্রীরাই নিজেদর নিয়ে রীতিমতো হাসি তামাশা করতেও ছাড়ছেন না।
সরাসরি ইসরাইলের মাটিতে, ইরানের অচিন্তনীয় আক্রমণের পর, কোন ধরনের পাল্টা প্রতিশোধ হামলা না চালাতে তেল আবিবকে বারবার সতর্ক করে আসছিলো হরিহর আত্মা যুক্তরাষ্ট্র। কথা শুনেনি, উল্টো পাল্টা দিতে গিয়ে উল্টো হয়ে হাসির খোরাক হয়েছে ইসরাইল। এখন প্রতিদিন নেতানিয়াহুকে বকছে ওয়াশিংটন, পাঠিয়েছে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত, যা কখনো কল্পনাও করেননি তিনি।
ইসরাইলি নেতার যখন এমন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, ঠিক তখনই দেশটির ওপর প্রথমবার সরাসনি আক্রমণ নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা- আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন। ইসরাইলের ওপর ব্যাপক ড্রোন ও মিসাইল হামলার পর জনসমক্ষে এই প্রথম কথা বললেন তিনি।
খামেনি বলেন, কতটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, আর কতটি ইসরাইয়েলে আঘাত করেছে, তা এখন দেখার বিষয় নয়। আসলে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ইরান এই অভিযানের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইরানি জাতির শক্তির উত্থান প্রমাণ করেছে। সশস্ত্র বাহিনী তাদের শক্তি এবং সক্ষমতার উত্তম চিত্র এবং ইরানি জাতির একটি প্রশংসনীয় ভাবমূর্তি তুলে ধরেছে।
এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি পাল্টা হামলাকে খাটো করে দেখেন। ইসরাইলি হামলায় ব্যবহার করা অস্ত্রকে তিনি বাচ্চাদের খেলনার সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, সেগুলো মনে হয় খেলনা ছিল, যা দিয়ে আমাদের বাচ্চারা খেলে। সেই সঙ্গে তেল আবিবকে অভয়বাণী দিয়ে তিনি বলেছেন, ইসরাইল কোনো উল্লেখযোগ্য আক্রমণ না করলে ইরানের পাল্টা হামলা করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
অন্যদিকে, ইসরাইলে আভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও তীব্র হয়েছে। ইসরাইলের একটি সেনা বিগ্রেডের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবরে যখন নেতানিয়াহু রেগে আগুন তখন তাতে ঘি ঢেলেছেন বিরোধীরা। ইসরাইলি লেবার পার্টির নেতা মেরাভ মাইকেলি একটি সেনা ইউনিট ভেঙে ফেলার আহবান জানিয়ে বলেছেন, এটি প্রকৃত কোনো কারণ ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।
ইসরাইলের এমন অবস্থার দেখে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির মানসিক সুস্থতা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছে। দ্য মিডল ইস্ট মনিটর পত্রিকা বলেছে, ইসরাইলিদের মধ্যে নানা বিভেদ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে। হেরেদি সম্প্রদায় ও ধর্মীয় জায়নবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক গভীর হয়েছে। আর ফরেন পলিসি জার্নাল ও নিউইয়র্ক পোস্ট বলেছিলো, ইসরাইল এখন অনেক দুর্বল ও অনিরাপদ।
ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন ইসরাইলি নাগরিকরা উদ্বিগ্ন ও সন্দিহান। দেশটির ভেতর থেকেই ধসে পড়া এবং ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাদের পৃষ্ঠপোষকরা। ফলে ইসরাইলের যুদ্ধে জেতার দিন পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জারও একবার সংশয় জানিয়ে বলেছিলেন অতি নিকট ভবিষ্যতে ইসরাইল আর টিকে থাকবে না।