ইরানের সঙ্গে টক্কর লাগতে গিয়েই কী নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনলো মধ্যপ্রাচ্যের ‘ব্ল্যাক শিপ’ বা কালো ভেড়া ইসরাইল? দেশটির ভেতরে-বাইরে যা চলছে তাতে এমন প্রশ্ন উঠছে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে। দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলো পকেটে নিয়ে ঘুরলেও অস্বাভাবিক রকম অস্থির আচরণ করছে রাষ্ট্রটি।
রীতিমতো শনির দশায় পেয়ে বসেছে যেন ইসরাইলকে। যার শুরুটা হয়েছিলো গেল বছরের সাত অক্টোবর থেকেই। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধে গাজায় হত্যা মিশনে নেমে গত সাত মাসে সেখানে ধ্বংস আর নিরীহ ফিলিস্তিনি হত্যা ছাড়া আর কোন অর্জনই নেই দেশটির।
এরপর পরিস্থিতির মোড় ঘুরাতে ইসরাইল দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুঁড়ে মারে। পরিণতিতে ইরানের কাছ থেকে অভাবনীয় এক আক্রমণের শিকার হতে হয় দেশটিকে। আর এর পাল্টা দিতে তো ইসরাইল তো এখন রীতিমতো গোটা বিশ্বের কাছে হাসির খোরাক।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বড় ধাক্কা। সম্প্রতি আমেরিকার নিউজ আউটলেট অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ‘নেতজাহ ইহুদা ব্যাটালিয়নের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।
মধ্যপ্রাচ্যের কসাই হিসাবে পরিচিত তেল আবিবের নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন এমন সিদ্ধান্তে রেগে আগুন তখন এলো আরও একটি খবর। গাজা থেকে হামাসের নজিরবিহীন হামলা রুখতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা।
গাজা অভিযানের ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ সংকট, ইরানের সঙ্গে টক্করে লেজেগোবরে অবস্থা, সবচেয়ে বড় বন্ধু আমেরিকার সঙ্গে টানাপোড়েন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বিশ্বজুড়ে তোড়জোড়- সব মিলিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার মতো কোনো অনুভূতি, ইসরাইলের নেতাদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।
সব দিক থেকে সমৃদ্ধ ও সুসজ্জিত থাকার পরও ইসরায়েল এমন অস্থির আচরণ কেন করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাহলে কি সত্যি হতে যাচ্ছে তালমুদে বর্ণীতি ভবিষ্যৎবাণী? ইহুদিদের একটি ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র- তালমুদে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্রই আট দশকের বেশি টিকবে না।
ইসরাইল কেন গাজায় উন্মত্ত আচরণ করছে, কেন তারা গোটা গাজাকে গিলে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, কেন তারা ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তি ছড়াচ্ছে, তার জবাব খুঁজতে গিয়ে ইসরাইলকে জড়িয়ে ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ শব্দগুচ্ছটি আবার জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।
ইংরেজিতে এই টার্মকে বলা হয় ‘কার্স অব এইট্থ ডেকেড’। আর আরবিতে বলে ‘লা'নাতুল আকদিস সামিন’। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের মুখেই নয় ইসরাইলি নেতাদের মুখেও এখন বাক্যটি বারবার উঠে আসছে। বলা হচ্ছে ইসরাইলের আয়ু আর মাত্র পাঁচ বছর।
অসলো চুক্তির জের ধরে ১৯৪৮ সালে ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। দেশটির ৮০ বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূর্ণ করবে ইসরাইল। তার মানে, হাতে আছে আর মাত্র পাঁচ বছর। চার কিংবা পাঁচ বছর পরই হয়তো বেজে উঠবে ইসরায়েলের চূড়ান্ত মৃত্যুঘণ্টা।
‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ নিয়ে সেই মৃত্যুঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন অনেক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যেভাবে মরিয়া হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল, যেভাবে মুসলিম নিধনে উন্মাদের মতো আচরণ করছেন নেতানিয়াহু, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ইহুদিরা ভেতরে অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে।
তাই শেষবারের মতো মরণকামড় দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইহুদিরা যে অষ্টম দশকের অভিশাপ নিয়ে ভীত, তা সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি নেতা এহুদ বারাক, নাফতালি বেনেট ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই হাজার বছরে ছোট বড় অনেক ইহুদি রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব আর হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ইহুদি রাজ্য ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। আধুনিক ইসরাইলও টিকবে কী-না, সেই উত্তর সময়ই বলে দেবে।
ডেভিডের রাজত্বকাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১০৫০ থেকে ৯৩০ পর্যন্ত। হাসমোনিয়ানের রাজত্ব ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬৭ পর্যন্ত। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও রাজ্য দুটিতে ভাঙনের সুর বেজে উঠেছিল ঠিক ৮০ বছরের মাথায়।