ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্কটা অনেকটা আবহাওয়ার মতো। এই ভালো তো, এই এই খারাপ। এই তো, গেলো কয়েক মাসে আগেই দেশ দু’টোর সম্পর্ক রূপ নিয়েছিল দা-কুমড়ায়। এখন আবার জোট হতে যাচ্ছে। তাই তো ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের মধ্যেই পাকিস্তান সফরে গেলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে কোন পথে হাঁটতে চান ইরান?
পাকিস্তান-ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক যেমন বৈরিতা রয়েছে, তেমনই রয়েছে মিত্রতাও। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তেহরানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার সময়ে এই দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের কিছুটা উন্নতিও হয়।
তবে ক্ষমতা থেকে ইমরান খানকে অপসারণের পর, এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পশ্চিমাদের সমর্থনপুষ্ট রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় আসার পরে সেই ধারাবাহিকতা কিছুটা থমকে গিয়েছিলো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রাইসির এই সফর এবার নতুন এক বার্তা দিতে যাচ্ছে। এমনটাই বলছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
প্রশ্ন উঠছে, ইসরাইলের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে কি পাকিস্তানকে কাছে টানছে ইরান? ইসলামাবাদ বলছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কার্যকর আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দু’দেশ এক সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছেন দুই নেতা।
বরাবরই পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সঙ্গে কৌশলগত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে পাকিস্তান ও ইরানের অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। কারণ, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের মধ্যে সব সময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু ইরান সৌদি আরবকে ভালো বন্ধু মনে করে না।
তাই রাইসির এই সফর শুধুই বাণিজ্য ও যোগাযোগে সীমাবদ্ধ থাকবে এমনটা মনে করে না। রাইসির সফর ইরানের জন্য পাকিস্তান তথা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের সমর্থন সুরক্ষিত করার একটি প্রচেষ্টাও। কারণ দেশটি সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে একটি ‘বিপজ্জনক সংঘাতে’ জড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইরান ও পাকিস্তান একই নীতিতে বিশ্বাসী, তাই সীমান্ত সংঘাত ভুলে অন্তত ইসরাইল ইস্যুতে অবস্থান একই থাকছে তেহরান ও ইসলামাবাদের। এখানে বলে রাখা ভালো, পাকিস্তান অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ, আর তেহরানের চিন্তায় রয়েছে সেই সমীকরণও।
ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কে সুসময় ও দুঃসময়-দুটোই ছিল। পাকিস্তানের জন্ম হবার পর থেকেই দুদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তবে ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লব এবং পাকিস্তানে ওয়াহাবি ধারার ইসলাম চর্চা বাড়তে থাকলে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়তে থাকে।
এরপর নানা সময়ে নানা ইস্যুতে তেহরান ও ইসলামাবাদের মধ্যে টানাপড়েন চলে আসছে। সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও দুই দেশ পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যতার বিষয়টিও তেহরানের জন্য অস্বস্তির। তারপরও দু’দেশের মধ্যে সব কোন দ্বন্দ্ব দেখা যায়নি।
এবারের পাকিস্তান সফর নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তার দেশের ‘অবিচ্ছেদ্য’ সম্পর্ক রয়েছে এবং সকল ক্ষেত্রে দু’দেশ তাদের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর। সোমবার ইসলামাবাদে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি গণহত্যার ব্যাপারে তেহরান ও ইসলামাবাদ উদ্বেগ জানিয়েছে এবং দু’দেশ অবিলম্বে এই যুদ্ধের অবসান চায়। তিনি জেরুজালেম আল-কুদসকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান।