ভারতের বড় দুটি রাজনৈতিক দল বিজেপি ও কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘বেকারত্বকে’ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে বিজেপি, যাদের কাছে 'হিন্দুত্ববাদ' সব সময়ই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার, তারাও এবার ধর্মীয় রাজনীতির বদলে বেকারত্বকে তোয়াজ করে ইশতেহার দিয়েছে।
রূপকথার দৈত্যের প্রাণভোমরা যেমন সাত সমুদ্রের নিচে কোনো এক রূপার কৌটার মধ্যে আবদ্ধ ছিল, তেমনি বিজেপি–কংগ্রেসের ইশতেহারে বেকারত্ব স্থান পাওয়ার প্রাণভোমরা ছিলো দেশটির লোকনীতি জরিপের ভেতরে।
লোকনীতি জরিপের কেতাবি নাম ‘সেন্টার ফর স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিস’- সংক্ষেপে ‘সিএসডিএস’। জরিপ বলছে, ভারতের ৬২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন আগের চেয়ে বর্তমানে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক এই গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের জরিপে অংশ নেয়া মানুষের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মুসলিম, ৫৭ শতাংশ দলিত হিন্দু এবং ৫৯ শতাংশ জনজাতির মানুষ মনে করে, বর্তমানে চাকরি পাওয়া কঠিন। এমনকি উচ্চবিত্ত শ্রেণির ৫৭ শতাংশ মানুষও এর সাথে একমত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, শুধু লোকনীতি জরিপই নয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও–এর বার্ষিক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ভারতে বেকারত্ব বেড়েছে এবং মোট বেকারের ৮৩ শতাংশেরই বয়স ত্রিশের কোটা পেরোয়নি।
এসব তথ্য নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির কপালে ভাঁজ ফেলার জন্য যথেষ্ট। কারণ ২০১৯ সালের লোকনীতি জরিপের ফলাফল বলছে, তখন মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়ার সময় বেকারত্বকে বিবেচনায় নিতেন। আর এখন সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে।
নির্বাচনের আগে এসব প্রাক–নির্বাচনী জরিপ ভোটের মাঠে বেশ প্রভাব রাখে। এবারের জরিপ বলছে, শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষ বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে বেশি আমলে নিচ্ছে। তবে জরিপের বাইরেও কিছু বাস্তবতা রয়েছে। যেমন, কর্ণাটকের নির্বাচনে বিজেপি হেরে গেলেও শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে থাকা ঝাঁ চকচকে বেঙ্গালুরুর মানুষেরা কিন্তু মোদির ওপরেই আস্থা রেখেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ থেকে বোঝা যায়, হিন্দুত্ববাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যতটা মধ্যবিত্ত ও তথাকথিত শহরে ‘আধুনিক’ মানুষদের মধ্যে জারি আছে, মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে ততটা নেই। প্রান্তজনদের কাছে এখনো জীবন ও জীবিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভোটের আগে বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যই প্রধান বিষয় হিসেবে দেখছে তারা।