বাড়ি ফেরার চেষ্টায় গাজা উপত্যকার অসহায় ফিলিস্তিনিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় নেয়া অঞ্চল থেকে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের এলাকায়। কিন্তু ফিরে এসে নিজেদের তিলে তিলে গড়া বাড়িঘর ধুলোর সাথে মিশে যেতে দেখে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়ছেন।
টানা দুইশ’ দিন ধরে অনাহারে, তৃষ্ণায় চরম মানবেতর পরিস্থিতিতে থাকা গাজার ফিলিস্তিনিরা ভীষণ ক্লান্ত। চায় একটুখানি স্বস্তি, এক দণ্ডের শান্তি। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার ভয়াবহ দুইশ’ দিন অতিক্রম হয়েছে। চরম দু:খ কষ্ট আর দুর্দশায় নাভিশ্বাস উঠেছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
তারা বলেন, কে আমাদের বাড়িঘর, স্বপ্ন, স্মৃতি সব ফিরিয়ে দেবে? সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ভাবার কথা, কিন্তু কি দুর্ভাগ্য। আমরা এমনি আগামী কালেরও স্বপ্ন দেখতে পারছি না। বাড়ি ফেরার চেষ্টায় নিজেদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি দেখে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়ছেন।
তাদের ভাষায়, কিছুদিন আগেই আমার বাড়িতে যখন বোমা হামলা হয় তখন সব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হই। ভেবেছিলাম সামরিক অভিযান শেষ হলে ফিরে আসবো। কিন্তু এসে দেখছি পুরো এলাকাই গুড়িয়ে দিয়েছে ওরা। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। সামনে অনিশ্চিত সময় ও জীবন।
প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয়, অনাহার, অনিদ্রায় বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো ছুটে ছুটে ক্লান্ত। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা উত্তর গাজার। সেখানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন বলে বারবার সতর্ক করছে জাতিসংঘ। গাজাবাসীরা বলছেন, উত্তর গাজার অবস্থা এখনও ভয়াবহ। বাড়িঘর সব শেষ। অসংখ্য বাচ্চা বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। এখানে খাবার, আর পানির অভাবে আমরা খুবই কষ্টে আছি। ত্রাণও আসছে না এদিকে।
গাজার উত্তরাঞ্চলে থাকা ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে একদল স্বেচ্ছাসেবক। বড় বড় হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে ঠিকই। তারপরও চাহিদার তুলনায় এ খাবার খুবই সামান্য। ফলে কারো ভাগে আধপেটা খাবার জুটছে, তো কেউ থাকছেন অনাহারেই। আর এটাই এখন গাজার প্রতিদিনেন দৃশ্যপট।
এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, বাচ্চারা না খেয়ে মারা যাচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে রোগীদেরও খাবার নেই। এখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। মাথার ওপর ছাদ নেই কারো। কি করে আরব বিশ্ব এই সবকিছু দেখেও দুইশ দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যেতে দিচ্ছে। আমাদের জীবনের কি কোনই মূল্য নেই?
গত সপ্তাহেও গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দুর্ভিক্ষ দূর করতে সেখানে দ্রুত বিপুল পরিমাণে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে, গাজাতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সেখানকার উপকূলে অস্থায়ী বন্দর তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।