গাজা উপত্যকার শেষ আশ্রয়স্থল রাফাহ শহরে ইসরাইলের সম্ভাব্য অভিযান, ইরানের হুমকি আর হামাস, হিজবুল্লাহ আর ইসলামিক জিহাদ নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত তখন কিন্তু বসে নেই ফিলিস্তিনিদের আরেক বন্ধু ইয়েমেনের সামরিক গোষ্ঠি হুতি। লোহিত সাগরে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হুতি যোদ্ধারা।
গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের প্রতিবাদে গেলো অক্টোবর থেকেই ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোয় রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় হামলা চালাচ্ছে। কখনও জাহাজ ছিনতাই, কখন মিসাইল ও ড্রোন হামলা, আবার কখনও ডুবিয়ে দিয়ে নিজেদের সামর্থ্য জানান দিচ্ছে হুতি যোদ্ধারা।
তাদের ভাষ্য, গাজায় ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞের শোধ নিচ্ছে তারা। এরিই ধারায় সবশেষে ইয়েমেনের হুতিরা গেল শনিবার জানিয়েছে, লোহিত সাগরে তারা আন্ড্রোমিডা স্টার অয়েল ট্যাংকার নামে একটি জ্বালানিবাহী জাহাজে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। হুতিদের দাবি, জাহাজটি ব্রিটিশ মালিকানাধীন।
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড বলেছে, ইরান-সমর্থিত হুতিরা ইয়েমেন থেকে লোহিত সাগরে জাহাজ-বিধ্বংসী তিনটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে। এর ফলে আন্ড্রোমিডা স্টার জাহাজের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া একটি মিসাইল এমভি মাইশা নামে আরেকটি জাহাজের পাশে পড়েছে।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, আমেরিকাকে আরও একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে হুতিরা। তাদের হামলায় আরও এক মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। গত শুক্রবার ইয়েমেনের ভেতরেই ড্রোনটিকে গুলি করে ভূপাতিত করার এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি মার্কিন সামরিক বাহিনী।
হুতির সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ইয়েমেনের আকাশসীমায় একটি মিসাইলসহ মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এ সময় ড্রোনটি শত্রুতামূলক মিশনে নিয়োজিত ছিলো।
মার্কিন সামরিক বাহিনী এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে যে, একটি এমকিউ-৯ ড্রোন ইয়েমেনের অভ্যন্তরে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ ধরনের একটি ড্রোনের দাম প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলেও জানিয়েছে সিবিএস নিউজ।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হবার পর থেকে এনিয়ে তৃতীয় কোনো মার্কিন সামরিক ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করল হুতি গোষ্ঠী। এর মধ্যে প্রথমটি গত বছরের নভেম্বরে ভূপাতিত করা হয়। আর হুতিদের হামলায় দ্বিতীয় মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
ইয়েমেন গত নভেম্বরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে তার কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে তিনটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে, এতে মার্কিন সরকারের কমপক্ষে ৯০ মিলিয়ন ডলার গচ্চা গেছে। হুতি মুখপাত্র দাবি করেছেন, লোহিত ও আরব সাগরে তাদের তাদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ইঙ্গো-মার্কিন জোট।
ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী শুরুতে বাব আল-মান্দাব প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাওয়া শুধুমাত্র ইসরাইল সম্পর্কিত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছিলো, কিন্তু ওয়াশিংটন এবং লন্ডন দেশটিতে বোমাবর্ষণ শুরু করার পরে মার্কিন এবং যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে নিয়ে আসতে অভিযান প্রসারিত করেছে।
হুতিদের ঠেকাতে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যৌথ হামলা চালালেও; সেগুলো তেমন কার্যকরী হচ্ছে না। হুতিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে।