ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ১৭ হাজার শিশু। গেলো ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে উপত্যকাটির শিশুরা। গাজায় বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের প্রত্যেকেরই হৃদয় ভেঙে দেয়ার মতো একটি করে গল্প রয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন সাত মাসে ছোট্ট শিশু ইয়াহিয়া হামুদা। যুদ্ধের কারণে মায়ের গর্ভ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম হয়েছে তার। রাখা হয়েছিল হাসপাতালের ইনকিউবেটরে। সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালে ইসরাইল বাহিনীর অভিযান শুরু করায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেয়া হয় তাকে।
এর মধ্যদিয়ে পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শিশুটি। এমনকি প্রায় তিন মাস তার সন্ধানও পাচ্ছিলের না বাবা-মা। অবশেষে জানতে পারেন রাফাহ'র আল আমিরাত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দেখভাল করছে ইয়াহিয়ার। তাতেই মেলে স্বস্তি।
এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়াতে এখনো আটকে আছে হামুদের বাবা-মা। কারণ, জাবালিয়া থেকে রাফাহ'র পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের পথ একই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপদজ্জনক। তাই সাত মাস ধরে তাদের আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত শিশুটি। মুঠো ফোনে সন্তানের ছবি দেখে সময় কাটে মা মুকাত হামুদা ও বাবা জাকারিয়ার।
ইয়াহিয়ার মা বলেন, গত সাত মাসের মধ্যে আমি এখনো ইয়াহিয়াকে দেখতে পাইনি। এখন তার ছবিগুলোই আমার কাছে শেষ সম্বল। আমি তাকে কোলে নিতে চাই। আদর করতে চাই। আমি তার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করেছি। আমার এখন একটাই আশা আমি যেন তাকে ফিরে পাই।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা শিশুটিকে আল্লাহ'র অশেষ রহমতে বাঁচাতে পেরে তারাও খুশি।
হাসপাতালের এক নার্স বলেন, হামুদা আমরা এখানে প্রায় চার মাস ধরে লালনপালন করছি। প্রচণ্ড খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে আল-আমিরাতি হাসপাতালে আনা হয়। তাকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে হয়েছে। এরপর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
ইয়াহিয়া এখন হাসপাতালটির নবজাতক ইউনিটেই বেড়ে উঠছে। গাজার পরিস্থিতি শান্ত হলে, বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ের অপেক্ষায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।