ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ শেষ হলো সবে মাত্র। আরও তিনটি ধাপ শেষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই নির্বাচন শেষ হবে ১ জন। এর দুই দিন পর, ৪ মার্চ জানা যাবে ভোটের ফল। ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটের আশা, এবার তারা চারশ’ আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠা নিয়েই তৃতীয়বার সরকার গঠন করবে।
তবে, লোকসভা নির্বাচনের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে, বিজেপির এমন আশাকে দুরাশা বলছেন দেশটির অভিজ্ঞ সিফোলজিস্ট বা নির্বাচন বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব। তিনি সোজা ভাষায় বলেছেন, এটি কোন বুথ ফেরত জরিপ নয়। বরং বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে তার মনে হয়েছে, এবার বিজেপির আশা পূরণ হচ্ছে না।
ভারতের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে কোন দল বা জোটকে অন্তত ২৭২টি আসনে জিততে হবে। তবে যোগেন্দ্র মত দিয়েছেন, ২৭২ আসনের চেয়েও অনেক কম আসন পাবে এবার বিজেপি। এমনকি শরিকদের নিয়েও এবার সরকার গঠনে ব্যর্থ হতে পারে নরেন্দ্র মোদীর দল।
ভোটের বুথ ফেরত সমীক্ষা ও জনমত সমীক্ষা করার ব্যাপারে যোগেন্দ্রর অভিজ্ঞতা সুদীর্ঘ। তাঁর কথায় প্রায় তিরিশ বছরের। এক সময়ে সি.এস.ডি.এস-এর সিনিয়র ফেলো ছিলেন তিনি। তার পর, লোকনীতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে প্রাক ভোট জনমত সমীক্ষা করতেন বা বুথ ফেরত সমীক্ষা জানাতেন।
সোমবার যোগেন্দ্র দাবি করেন, তিনি রাজ্য রাজ্য ঘুরে যা বুঝেছেন তাতে করে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার অনেক কম আসন পাবে। যোগেন্দ্রর মতে, অনেক নিচে নেমে যাবে বিজেপির আসন সংখ্যা। এমনকি শরিকদের নিয়ে এনডিএ-র আসন সংখ্যাও ম্যাজিক নাম্বার নাও ছুঁতে পারে।
যোগেন্দ্র বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বিজেপিই আবারও ক্ষমতায় আসছে। সেই কারণে অনেকে বলছেন, ভোট দিয়ে কী হবে, জিতবে তো মোদিই। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বাস্তব ছবিটা দেশকে দেখানো আমার কর্তব্য বলে মনে করছি।
তার হিসাবে গেলোবার উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ মিলিয়ে মোট ৮৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৬৯টি আসনে জিতলেও এবার কমপক্ষে ১৫টি কমতে পারে। বিহারে কম করে ১৫টি আসন হারাতে চলেছে এনডিএ। আর, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ উত্তর-পূর্বে রাজ্য মিলিয়ে ৬৫টি আসনের মধ্যে ১০টি আসন কমবে বিজেপির।
দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, ও হিমাচল প্রদেশেও বেশ চাপে রয়েছে এনডিএ। হরিয়ানায় ১০ আসনের মধ্যে গত ভোটে ১০টিতেই জিতেছিলো বিজেপি। এবার এই চার রাজ্য মিলিয়ে কমপক্ষে ১০ আসন কমবে বিজেপির। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে কম করে ১০টি আসন বিজেপির কমবে।
রাজস্থানে ২৫টি লোকসভা আসন রয়েছে। গুজরাটে ২৬টি। গতবার সবগুলোতে জিতেছিল পদ্মশিবির। কিন্তু এই দুই রাজ্য মিলিয়ে এবার কম করে ১০টি আসনে হারছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪২টিতে জিতেছিলো এনডিএ। সেখানে খুব কম করে হলেও ২০টি আসনে হারছে এনডিএ।
কর্নাটকে ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে গত ভোটে বিজেপি ২৬টি আসনে জিতেছিলো। এবার কম করে ১০টি আসন সেখানে হারছে তারা। তবে, যোগেন্দ্রর মতে, সবটাই লোকসানে নয়, তামিলনাডু, কেরালা ও তেলেঙ্গনা মিলিয়ে খুব বেশি হলে বিজেপির ৫টি আসন বাড়তে পারে।
অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে জোটে থাকায় ১০টি আসনে লাভ হতে পারে গেরুয়া শিবির তথা এনডিএ-র। তবে, প্রথম চার দফার ভোটের পরে শুধু যোগেন্দ্র নন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে মনে করেছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
যোগেন্দ্রর হিসেবে, গতবারের তুলনায় ৭০টি আসন কমতে পারে বিজেপির। অর্থাৎ গেরুয়া শিবির ২৩৩টি আসন পেতে পারে। আর এনডিএ জোটের দলগুলো পেতে পারে ৩৫ আসন। মোট ২৬৮টি আসন জিততে পারে এনডিএ যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে বেশ কম।